কালিয়াকৈরে রংধনুর রঙে রঙিন বিদ্যালয়

শিক্ষার্থী ধরে রাখা এবং আনন্দদায়ক পরিবেশে পাঠদান, আকর্ষণীয় পাঠের পরিবেশ সৃষ্টিতে গাজীপুরে বিদ্যালয়গুলো রংধনুর রঙে সাজানো হচ্ছে। আর এই পরিকল্পনার মূলে আছেন কালিয়াকৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের কারণে এরই মধ্যে তিনি বেশ আলোচিত।

‘সেজেছে স্কুল রংধনুর রঙে, শিখবে শিশু মনেপ্রাণে’ স্লোগানে কালিয়াকৈর উপজেলার ১২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রংধনুর সাত রঙে সাজানোর কাজ চলছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যগুলোতে রঙের কাজ চলছে।

রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলে, ‘কয়েক দিন জ্বর ছিল, স্কুলে আসতে পারিনি। আমাদের স্কুল রঙিন করা হয়েছে, দেখতে রংধনুর মতো, এটা শুনে আজকেই চলে এসেছি। অনেক সুন্দর লাগছে।’

উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংধনুর রং দিয়ে উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশের দেয়ালে আলপনার চিত্র আঁকা হয়েছে। রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দোতলা ভবনের সব দিকেই শিল্পীর তুলিতে সাত রং তোলা হয়েছে। দেখতেই যেন মনে হয় নীল অকাশে রংধনু উঠেছে।

চান্দরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুঁই আক্তার বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর হয়েছে। এখন আমাদের বাবা-মাও স্কুল দেখতে আসে।’ মজিদচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইয়ূম হোসেন বলে, ‘আমাদের স্কুলে আগে পরিবেশ ভালো ছিল না। এখন স্কুল অনেক সুন্দর হয়েছে।’

মজিদচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হজরত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে মেরামত বরাদ্দ ও স্লিপ বরাদ্দের টাকা দিয়ে আমাদের স্কুলটি রং করানো হয়েছে। এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আশা করছি এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা কমে আসবে।’

রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আফসানা পারভীন বলেন, স্কুলের চারদিকে সাত রঙে রাঙিয়ে তোলায় স্কুলের পরিবেশ আকর্ষণীয় হয়েছে। বিদ্যালয়ের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে আসছে। অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন।

কালিয়াকৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, শিশুর শিক্ষণপ্রক্রিয়ায় যেসব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর চারপাশের পরিবেশ। একটি আদর্শ, আনন্দমুখর, শিশুবান্ধব পরিবেশ শিশুর বিদ্যালয়ে আসার প্রথম আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। তাই এই পরিবেশ হতে হবে আনন্দদায়ক ও সহায়তামূলক, যেখানে শিশু নিরাপদ বোধ করবে। এই লক্ষ্যে উপজেলার ১২২টি বিদ্যালয়কে রংধনু রঙে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুল আমীন বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা শুরু করবে এবং যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়ছে, তাদের উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নতুন এই উদ্যোগে ভালো ফল আসবে বলে মনে করছি।’