ভবনগুলো বেহাল, জমি বেহাত

দীর্ঘদিনের অব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন ভবন। সম্প্রতি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার আবাসিক ভবনে।  ছবি: প্রথম আলো
দীর্ঘদিনের অব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন ভবন। সম্প্রতি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার আবাসিক ভবনে। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন (বিএস ভবন) ও বীজ সংরক্ষণাগারগুলো জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনগুলোর জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় বহুদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় এ রকম ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এসব ভবন কৃষি বিভাগের দখলে থাকলেও দলিলসহ রেকর্ড কৃষি বিভাগের নামে না হওয়ায় ওই সব ভবন ও জমি সংস্কার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার তিনটি বাসভবন ও একটি বীজাগার ভবন, নবাবগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার ভবন পাঁচটি, বীজাগার দুটি এবং একটি উদ্ভিদ সংরক্ষণাগার রয়েছে। ঘোড়াঘাট উপজেলায় তিনটি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ভবন ও একটি বীজাগার রয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ভবনগুলোতে দুটি করে ইউনিট রয়েছে। প্রতিটিতে তিনটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার রয়েছে। বীজাগারগুলোতে তিনটি করে কক্ষ রয়েছে। এসব ভবন ছাড়াও ওই সব ভবনের নামে ১১ শতক থেকে ৬৬ শতক পর্যন্ত জমি রয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ১৯৬০-৬১ সালে বীজাগার হিসেবে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৮০-৮১ সালের দিকে বেশির ভাগ ভবনকে কিছুটা রূপান্তর করে ব্লক সুপারভাইজার অর্থাৎ বর্তমান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসব ভবন আর সংস্কার করা হয়নি।
ওই তিন উপজেলার কৃষি কার্যালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, বসবাস ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ১৯৮৬-৮৭ সালের পর থেকে এসব ভবনে আর কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। বীজাগারগুলোও কোনো কাজে ব্যবহার করা হয় না।
সরেজমিনে ওই তিন উপজেলার ওই সব ভবন ঘুরে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ বেশির ভাগ ভবনই জঙ্গলে ঢাকা পড়ে গেছে। লোকজন ভবনের দরজা–জানালা খুলে নিয়ে গেছে। কয়েকটি ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় ভূমিহীন লোকজন বসবাস করছে। এসব ভবন সরকারি কাজে ব্যবহৃত না হওয়ায় আশপাশের জায়গা স্থানীয় লোকজন ব্যবহার করছে। কেউ কেউ বর্তমান ভূমি জরিপে এসব জমি নিজেদের নামে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন।
নবাবগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজ সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এসব ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষি কর্মকর্তা এসব ভবন সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর বরাদ্দের হিসাব চান। হিসাব দেওয়া হলেও আজও এসব ভবন সংস্কার ও জমি রক্ষায় কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয়ের উপপরিচালক তৌহিদ ইকবাল প্রথম আলোকে জানান, ভবন ও সংশ্লিষ্ট জমি কৃষি বিভাগের দখলে থাকলেও এগুলোর দলিল এবং অনেকগুলোর রেকর্ড কৃষি বিভাগের নামে হয়নি। এ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। জটিলতা নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। জটিলতা নিরসন হলে এসব ভবনে ইউনিয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।