পাইলিংয়েই অনুদানের টাকা শেষ, এখন নির্মাণকাজ বন্ধ

নির্মাণাধীন রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার ভবন।
নির্মাণাধীন রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার ভবন।


রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষে হয়েছে গত জানুয়ারিতে। এর মধ্যে শেষ হয়েছে কেবল পাইলিংয়ের কাজ। এতে খরচ হয়ে গেছে তিন কোটি টাকা। এর মধ্য ভারতীয় অনুদানের টাকা রয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। সিটি করপোরেশন বলছে, নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও প্রায় দুই কোটি টাকার প্রয়োজন। তারা নিজেরাই এই টাকার ব্যবস্থা করবে।
রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়া এলাকায় ১৮৮৪ সালে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায় গ্রন্থাগারের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি দান করেন। এখানেই তৈরি করা হয়েছিল দ্বিতল ভবন। এর খরচ বহন করেছিলেন কাসিমপুরের জমিদার কেদার প্রসন্ন লাহিড়ী। তাঁর বাবার নামে ভবনের মিলনায়তনের নাম রাখা হয়েছিল ‘গিরিশ চন্দ্র হল’। এই গ্রন্থাগারে ১০টি কক্ষ ছিল। বই রয়েছে ৩৬ হাজার। এর মধ্যে ২৯টি বইয়ে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐতিহ্যাবাহী এই গ্রন্থাগার দেখে অভিভূত হয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, মোহিতলাল মজুমদার, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জলধর সেন, স্যার আজিজুল হক, সজনী কান্ত দাস, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, শরৎচন্দ্র বোসসহ আরও অনেকে। এ গ্রন্থাগার সম্পর্কে তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা এখনো জ্বল জ্বল করছে রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারের মন্তব্য খাতায়।
ভারত সরকারের অনুদানে এ গ্রন্থাগারের স্থলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য গত বছর জানুয়ারি মাসে ঐতিহাসিক ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। বইগুলো রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজশাহীতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। অবশ্য তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং প্রত্নতত্ত্ব অবকাঠামো উন্নয়নসাধন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে রাজশাহী ও রাজশাহী মহানগরীর টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন-ঘোড়ামারা সাধারণ অডিটরিয়াম নির্মাণকাজ।’
এ প্রকল্পের অধীনে পুরোনো গ্রন্থাগারের জায়গায় ৫২ ফুট উঁচু পাঁচতলা ভবনের সমান স্থাপনা নির্মাণ করার কথা। যেখানে গ্রন্থাগারের পাশাপাশি ৩০০ আসনের একটি উন্নত মানে মিলনায়তন নির্মাণের কথা রয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম আরসিসি এল-আরইএমসি জেভি। ঠিকাদারের সঙ্গে এ নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ছিল ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন বলছে, এর মধ্যে ভারত সরকারের অনুদানের ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা শেষ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশন আরও ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পে মোট ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সেখানে কোনো শ্রমিক কাজ করছেন না। কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া গেল না। বাইরে গেটেও তালা দেওয়া রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত সরকারের অনুদানের টাকা আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগতে ব্যর্থ হচ্ছি। সিটি করপোরেশন ভারত সরকারের অনুদানের প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব কম দিচ্ছে। পাইলিংয়ে এত টাকা কীভাবে খরচ হলো তা ভারত সরকারের তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করি।’
রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তাঁদের ধারণা ছিল, শুধু কলামের ওপরেই ভবন নির্মাণ করা যাবে। এই প্রাক্কলনের ওপর নির্ভর করেই ভারত সরকারের বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই জায়গার মাটি খুব খারাপ। ৭০ ফুট পর্যন্ত ১১৩টি পাইলিং করতে হয়েছে, যা প্রাক্কলনের পুরোপুরি বাইরে ছিল। এতেই ভারত সরকারের অনুদানের ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের আরও ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল প্রকল্প শেষ করতে যদি বাড়তি টাকার প্রয়োজন হয়, তবে তা রাজশাহী সিটি করপোরেশন দেবে। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে টাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করে আবার নির্মাণকাজ চালু করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদের ব্যাপারে তিনি বলেন, মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার বিধান আছে। সেটা কোনো সমস্যা নয়।