একচেটিয়া ভোটে আবার নেতৃত্বে আলম-মুশফিক

আলম খান ও মুশফিক জায়গীরদার
আলম খান ও মুশফিক জায়গীরদার

কাউন্সিলরদের একচেটিয়া ভোটে আবারও সিলেট মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন আলম খান (মুক্তি) ও মুশফিক জায়গীরদার। গত শনিবার সম্মেলন শেষে রাতে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটাভুটি হয়। সেখানে পুরোনো দুই মুখকেই বেছে নিয়েছেন নেতা–কর্মীরা।
নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে ৪৭৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সভাপতি পদে ৩৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিগত কমিটির আহ্বায়ক আলম খান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একমাত্র প্রার্থী শান্ত দেব পান ৬৬ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন গত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিক জায়গীরদার। এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আবদুল লতিফ ৪১ ও এম রায়হান চৌধুরী ১৮ ভোট পান।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুকসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটাভুটি হয়। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়ার পর প্রকাশ্যে গণনা হয়। রাত ১১টায় ফলাফল ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান। এ সময় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আহমদ আল কবিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ভোটের মাধ্যমে প্রায় ২৭ বছর পর সিলেটে যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাভুটি হলো।
সংগঠন সূত্র জানায়, সর্বশেষ ১৯৯২ সালে সিলেটে ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর ভোট হয়নি। আর সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৪ সালে। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সম্মেলন আর ভোটাভুটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার বিষয়টি আগেই কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছিল। এ জন্য দুটি পদে প্রার্থিতার প্রচারণায় নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে নানা রকম উৎকণ্ঠাও ছিল। অবশেষে কোনো অঘটন ছাড়াই ভোটাভুটি সম্পন্ন হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে একচেটিয়া ভোটে জয় নিয়ে কিছু মিশ্রপ্রতিক্রিয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে বিরাজ করছে।
ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এমন ১১ জন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা বলেছেন, আলম খান ও মুশফিক জায়গীরদারের পক্ষ থেকে প্রচারণা বেশি ছিল। অনেক ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সময়ই জেনেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নাম। এ জন্য আলম-মুশফিক একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন।
সভাপতি পদে আলম খান ছাড়া আরও চারজন প্রচারণায় ছিলেন। শেষে দিকে এসে শুধু শান্ত দেব সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বাকি তিনজনের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আগমুহূর্তে সভাপতি পদে নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শ্যামল সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি, তাঁরা কাউন্সিলর তথা ভোটারতালিকা পাইনি। এ জন্য ভোটারদের কাছে ঠিকঠাক প্রচারণা করারও সুযোগ পাইনি। এ অবস্থায় যে দুজন বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা একতরফা ভোটে জয়ী হয়েছেন।’
তবে কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের মধ্যে এ রকম কিছু প্রতিক্রিয়া থাকাটা স্বাভাবিক মনে করছেন আলম খান ও মুশফিক জায়গীরদার। নবনির্বাচিত সভাপতি আলম খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলাম। চেষ্টা করেছি পরিচ্ছন্ন থাকতে। ভোটে তারই প্রতিফলন হয়েছে।’ মুশফিক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে যুবলীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার।’
আজ সোমবার যুবলীগের সিলেট জেলা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী না হলে ভোটাভুটি করে দুটি পদে নেতা নির্বাচন করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন
নবনির্বাচিত সভাপতি আলম খান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মুশফিক জায়গীরদারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। অভিনন্দনবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল হয়েছে, যা সত্যি প্রশংসনীয়। কাউন্সিলররা প্রত্যক্ষ ভোটে তাঁদের পছন্দের নেতা নির্বচিত করেছেন, যা দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চাকে আরও প্রশংসিত ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।