নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তা ছাড়া নদের পানিতে তলিয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি। বসতঘর ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা নদতীরবর্তী বাসিন্দা ও কৃষকেরা।
পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদের তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেওয়ায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভাঙনের কারণে এলাকাবাসী আতঙ্কে না ঘুমিয়ে রাত পার করছে।
গত শনিবার স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদ, উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও ইউএনও মো. নাহিদ হাসান ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকী, আলগীরচর গ্রাম ও জাঙালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতঘর, গোয়ালঘর, রান্নাঘর, নলকূপ, শৌচাগার ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ছে আরও অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর এ মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। তা ছাড়া নদের পানিতে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে ক্ষতি হলেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
পাকুন্দিয়া চর এলাকার কয়েকটি গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস সবজি চাষ। ব্রহ্মপুত্রের তীরে ব্যাপক সবজির আবাদ হয়ে থাকে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চরাঞ্চলের এসব সবজি দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হয়ে থাকে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দিন দিন পানি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব এলাকার কমবেশি সবাই গবাদিপশু লালন-পালন করে থাকেন। কিন্তু খাবার ও বাসস্থানের সংকটের কারণে তাঁদের অনেকেই কম মূল্যে গবাদিপশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চরকাওনা মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের ওয়াসিম মিয়া জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছর ১৬ কাঠা জমিতে বেগুন ও কাঁচা মরিচের আবাদ করেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। ইতিমধ্যে কিছু টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আগামী ছয় মাস পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেগুন ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো বলে জানান তিনি। কিন্তু গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে তাঁর জমি তলিয়ে যাওয়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।
একই গ্রামের তুলাচাষি ইসলাম উদ্দিন জানান, ১৪ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। এতে তাঁর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের পানিতে সবকিছু তলিয়ে গেছে। তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
একইভাবে সবজিখেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক বকুল মিয়া, মো. শহীদুল্লাহ, মফিজ উদ্দিন, সাত্তার মিয়া, মো. হুমায়ুনসহ আরও অনেকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান জানান, ভাঙনে চরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বছর যাতে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা বেশি হারে দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রী ও ত্রাণমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করার জন্য তাঁদের পাকুন্দিয়ায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের সাংসদ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপাতত অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভাঙন রোধে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে নদপাড়ে বাঁধ বা অন্য স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।