অ্যাপে টিকিট কাটার চিত্র এবার খানিকটা ভিন্ন

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, অবস্থা দেখে মনে হয়েছে গতবারের চেয়ে এবারে মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইনে টিকিট কাটার চিত্রটা কিছুটা উন্নত হয়েছে। মোবাইল অ্যাপে এবং অনলাইনে আজকে ১০ হাজার ৭৭৪টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্য সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।

আজ সোমবার কমলাপুরে রেলওয়ের স্টেশন পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গতবার ঈদের টিকিট অ্যাপে কাটতে গিয়ে যে ভোগান্তি তৈরি হয়েছিল এবার সে অবস্থার বেশ খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। কিছু অভিযোগ থাকলেও অ্যাপে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। কত টিকিট বিক্রি হচ্ছে, তা মনিটর করে অ্যাপে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে মোবাইল অ্যাপে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ঈদুল আজহায় ঈদে অগ্রিম টিকিট প্রত্যাশীরা মোবাইল অ্যাপে টিকিট কাটতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। যারা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার জন্য ঢু মেরেছিলেন তারা বলছেন, সকাল ৬টায় মোবাইল অ্যাপস চালুর পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু টিকিট সংগ্রহ করতে বা কাটতে পারেননি অনেকেই।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২৯ জুলাই সোমবার আগামী ৭ আগস্টের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, কাল ৩০ জুলাই ৮ আগস্টের, ৩১ জুলাই ৯ আগস্টের, ১ আগস্ট ১০ আগস্টের এবং ২ আগস্ট ১১ আগস্টের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে।

বেলা ১১টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন রেলপথমন্ত্রী। তিনি যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি ও পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নেন। এ সময় টিকিট প্রত্যাশীরা ‘সার্ভার ডাউন’, ‘লাইন এগোচ্ছে না’সহ নানান অভিযোগ তুলে ধরেন। এরপরই মন্ত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। অ্যাপসের ভোগান্তির বিষয় নিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয়েছে গতবারের চেয়ে এবারের চিত্রটা কিছুটা উন্নত হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান যে, মোবাইল অ্যাপ এবং অনলাইনে ১০ হাজার ৭৭৪টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্য সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত মোবাইল অ্যাপে ৩ হাজার ৬৭৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর অনলাইনে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৯ টি। এই দুই মিলে মোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৩ টি। ৩ হাজার ৩১১টি টিকিট অবিক্রীত আছে।

রেলপথমন্ত্রী জানান, কাউন্টারের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩৭টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।

মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঈদ শেষে ট্রেনে ঢাকায় ফেরার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৫ আগস্ট থেকে। চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। ৫ আগস্টে দেওয়া হবে ১৪ আগস্টের ফিরতি টিকিট। আর ৬ আগস্ট ১৫ আগস্টের, ৭ আগস্ট ১৬ আগস্টের, ৮ আগস্ট ১৭ আগস্টের এবং ৯ আগস্ট ১৮ আগস্টের টিকিট দেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট নিতে হবে। তিনি জানান, ১১ ও ১৪ আগস্ট ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।

তবে মন্ত্রী যখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট না পেয়ে হট্টগোল করছিলেন।

ভোগান্তির অভিযোগ এবারও
কমলাপুর রেলস্টেশনে যারা টিকিট কিনতে আসছেন, তাঁদের মধ্যে মোবাইল অ্যাপে টিকিট বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। কেউ কেউ বলছেন সার্ভার স্লো। টিকিট কেনা যায় না। আবার কেউ কেউ সহজেই টিকিট পাওয়ার কথা বলছেন। যারা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার জন্য ঢু মেরেছিলেন তারা বলছেন, সকাল ৬টায় মোবাইল অ্যাপস চালুর পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু টিকিট সংগ্রহ করতে বা কাটতে পারেননি অনেকেই। সোমবার কমলাপুরে রেলওয়ের স্টেশনে কয়েকজন যাত্রী ভোগান্তির অভিযোগ করেন।

বেসরকারি সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামাল মাসুদ প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, সকাল ৬টার দিকে মোবাইল অ্যাপের সার্ভারে প্রবেশের পর থেকেই তিনি সেখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। এক সময় সার্ভার ডাউন দেখাচ্ছে তো আর এক সময়ে দেখাচ্ছে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। মোবাইল অ্যাপে টিকিট না পেয়ে তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন। তাঁর ধারণা, মোবাইল অ্যাপের যারা এডমিন তারা নিজেরাই টিকিট কেটে নিয়েছেন। আর এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করবেন।

কামাল মাসুদ আরও বলেন, সকাল ৬টা থেকে যখন সাড়ে ৮টা পর্যন্ত টিকিট কাটতে চেষ্টা করছিলেন তখন দিনাজপুরগামী একটি ট্রেনের টিকিট তিনি অবিক্রীত অবস্থায় পেয়েছিলেন। সেটা তিনি কাটতে গিয়ে পারেননি। কারণ মোবাইলে বারবার লোডিং লোডিং দেখাচ্ছিল। আর একপর্যায়ে সেই টিকিটি বিক্রি হয়েছে বলে অ্যাপে দেখাচ্ছে।

রেলওয়ের স্টাফ মুকুল হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা যেন নিতে না হয় এ জন্য মোবাইলে তিস্তা ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু টিকিট পাননি। এরপর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে সাধারণ জনগণের মতো লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়ানোর পর বলা হলো টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রেলের কর্মচারী হিসেবে (কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কিছু টিকিট রক্ষিত থাকে) হয়তো আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় টিকিট পাব। তবে নিয়ম মেনে টিকিট কেনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

ইমদাদুল হক নামের শিক্ষার্থী চুয়াডাঙায় যাবেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল অ্যাপে গতবার ঈদের যে অভিজ্ঞা হয়েছে সে ভোগান্তি এড়াতে তিনি আর সে পথ মাড়ান নি। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটায় তিনি কমালপুরে এসেছেন। সোমবার সকাল ১১টায় তিনি টিকিট পেয়েছেন।

ইমদাদুল হক বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর কামলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আগাম টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা যখন বাড়ছিল তখন লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছিল। পরিস্থিত শান্ত করার জন্য নিজ উদ্যোগে টিকিট প্রত্যাশী কয়েকজন ব্যক্তি আহতদের নামের তালিকা তৈরি করে সিরিয়াল করে দিয়েছেন। এতে তার সিরিয়াল ছিল ৩৯ নম্বর। ৩৯ পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানও এসেছেন টিকিট কাটতে, গতকাল রোববার মাগরিবের নামাজের পরই লাইনে দাঁড়ান তিনি। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি দিনাজপুরগামী ট্রেনের টিকিট পেয়েছেন।