দিনাজপুরে ২৭ ইটভাটা মালিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

দিনাজপুরে ইটভাটা চালাতে জাল আদেশ দেখানো এবং জাল নথি তৈরির মামলায় ২৭ ইটভাটার মালিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দিনাজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহম্মেদ ভূঞা এ আদেশ দেন।

এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় গত ২০ জুন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আ. হামিদ বাদী হয়ে দিনাজপুরের ২৯টি, নীলফামারীর ১টি এবং রংপুরের ১টি ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ নিয়ে ২১ জুন প্রথম আলোয় ‘৩১ ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পার্বতীপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৩০ আসামি সম্প্রতি হাইকোর্টে জামিন নিতে গেলে আদালত আসামিদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে জামিন প্রার্থনা না করায় ইটভাটার মালিক চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেনকে ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মোকারম হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২০ মে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ ইটভাটা চালাতে কথিত জাল আদেশ তৈরি এবং জাল নথি তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে তিন জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মামলার আসামিরা হলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার যমুনা ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী হাসান শাহরিয়ার, আরবি ব্রিকসের রবিউল আলম মুন্সী, এইচবি ব্রিকসের এ জেড এম রেজওয়ানুল হকের এইচবি ব্রিকস, অর্ণব ব্রিকসের নুর আলম ও ইব্রাহীম আলী মন্ডল, বারী ব্রিকসের ফখরুল ইসলাম শাহ, এ অর বি ব্রিকসের রেজওয়ানুল হক, আরটি ব্রিকসের মো. তাশরিফুল, এসএ ব্রিকসের আমানুল্লাহ প্রামাণিক, জেএস ব্রিকসের শাহরিয়ার ইফতেখারুল আলম চৌধুরী, ফাইভ স্টার ব্রিকসের নজরুল ইসলাম, হক ট্রেডার্সের জিকরুল হক, মাইশা ব্রিকসের রেজাউল ইসলাম, এসপি ব্রিকসের পলাশ কুমার রায়, শফী ব্রিকসের মো. শফিকুল ইসলাম, আজাদ ব্রিকসের আবুল কালাম আজাদ, হামিদ অ্যান্ড সন্স ব্রিকসের মো. মোকারম হোসেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার রহমান ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ওরফে মিল্টন, নবী ব্রিকসের মাসুদুর রহমান চৌধুরী, এলএইচবি ব্রিকসের লোকমান হাকিম, এসবি ব্রিকসের মঞ্জুরি-ইশ-শাহাদৎ; বিরল উপজেলার এমবি ব্রিকসের মাসুদ রানা, এএম ব্রিকসের রবিউল হাসান; চিরিরবন্দর উপজেলার এনএইচ ব্রিকসের নাজমুল হুদা, আরএ ব্রিকস-১ ও আরএ ব্রিকস-২ এর রফিকুল ইসলাম; দিনাজপুর সদরের পিআর ব্রিকসের পলিন চন্দ্র রায় ও এআর ব্রিকসের মাহফুজুল হক আনার; কাহারোল উপজেলার এএস ব্রিকসের এসএম হায়দার; নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এনআরবি ব্রিকসের শফিকুর রহমান; রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কাজী ব্রিকসের কুদরতি খুদা ও আসাদুজ্জামান।

তবে দিনাজপুর সদরের এ আর ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুল হক আনার প্রথম অলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে তিনি ভাটাটি বিরলের জনৈক মোস্তফার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ–সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ অনেক আগেই জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া আছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হয়বতপুর গ্রামের পাশে যমুনা ইটভাটার কারণে হয়বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ চরম সমস্যা হচ্ছিল। ভাটা বন্ধে স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করলেও ভাটা বন্ধ হচ্ছিল না। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা মনওয়ারা জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে একটি চিঠি লেখে। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বিষয়টি পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নজরে আসে। ভাটা বন্ধে দুই মন্ত্রী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।