জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে

দেশের উন্নয়নের জন্য একের পর এক শিল্পকারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের উদ্যোগে গঠিত ‘টেকসই জীববৈচিত্র্য রক্ষাবিষয়ক জাতীয় মঞ্চের’ আত্মপ্রকাশবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সোমবারের এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী মাহফুজ উল্লাহকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। মরহুম ওই সাংবাদিকের পক্ষে সম্মাননা নেন তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সম্মাননা তুলে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ বলেন, বাংলাদেশ একদিকে যেমন উন্নয়নের পথ হাঁটছে, অন্যদিকে পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে এই বিশ্ব ঐতিহ্যের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জার্মান ওই রাষ্ট্রদূত মেঘনা নদী পরিদর্শনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ওই নদীর পানি পরিশোধন করে ওয়াসা ঢাকা শহরের অধিবাসীদের জন্য সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সেখানে যে পরিমাণে দখল ও দূষণ হচ্ছে, তাতে পানি পরিশোধনের খরচ বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশের ওপরে চাপ তৈরি হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ। এতে বাংলাদেশের মতো দেশের ক্ষতি বেড়ে গিয়ে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষা করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সক্রিয় আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন ও সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এ কাজ করতে গিয়ে প্রকৃতির ওপরে কিছুটা চাপ পড়বে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষের চেয়ারম্যান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য এটা দরকার। তবে পরিবেশ রক্ষা না করে এসব উন্নয়ন প্রকল্প হলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না।

আইইউসিএন, বাংলাদেশ–এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমীন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরে তার সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইইউসিএন, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হাসনা জসিমউদ্দিন মওদুদ। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান হাওলাদার, বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (ন্যাকম) চেয়ারম্যান আবদুর রব মোল্লা প্রমুখ।