গাইবান্ধায় বন্যায় ফসলের ক্ষতি ৯২ কোটি টাকা

‘হামার জমি নাই। ম্যালা ট্যাকা দিয়া এক বিগে জমি বনদোক নিচি। তিন হাজার ট্যাকা খরোচ করি আমনের আবাদ করচি। তাক বানে খায়া গেল। একন ধান নাগবার গ্যালে চার হাজার ট্যাকার চারা নাগবে। সে ট্যাকা পামো কোনটে?’

এ কথা গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের মইনুল হোসেনের। একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বললেন, ‘হামার চার বিগে জমির ধান নষটো হচে। বানের সমায় চাউল, চিড়া পাচি। কিনতো একনো সোরকার থাকি চারা-বীজ পানো না।’

মইনুল ও নজরুলের মতো গাইবান্ধার ১ লাখ ৮২ হাজার ৫২২ জন কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যা ১০ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এতে এ জেলার ৯২ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কৃষি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার সকালে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। কোথাও গাছ পচে গেছে। পচে যাওয়া গাছ গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোথাও গাছ শুকিয়ে গেছে। অনেক কৃষক ধানগাছ পরিষ্কার করছেন।

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের জামাল শেখের পেশা কৃষি। ছয় সদস্যের সংসার তাঁর। পাঁচ বিঘা জমি চাষাবাদ করেন। এবার চার বিঘায় রোপা আমন ও এক বিঘায় পাট চাষ করেন। পাঁচ বিঘাই বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে।

একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ্যাকনা ছাগোল বেচি দুই বিগে জমিত ধান, এক বিগে জমিত ভুটটে নাগাচিনো। বানোত সগ শ্যাষ। হামরা সোরকারের কাচে ট্যাকা চাইনে। সোরকার জানি হামারঘরোক চারা দ্যায়’।

সদর উপজেলার কামারজানি গ্রামের সাদ্দাম মিয়া বলেন, বন্যায় তাঁর এক বিঘা জমির শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। দাম বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় গাইবান্ধার ৭টি উপজেলার ৭ হাজার ৫১৯ দশমিক ৯০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৩১ হেক্টর, আমন বীজতলা ২ হাজার ৪৭১ দশমিক ৫০ হেক্টর, আউশ ধান ২ হাজার ৩৮৮ দশমিক ৪০ হেক্টর, পাট ১ হাজার ৬১২ হেক্টর, শাকসবজি ৯৭১ হেক্টর, পানের বরজ ৩ হেক্টর এবং অন্যান্য ফসল ৪৩ হেক্টর।