'অ্যাপে টিকিট পাই নাই'

দ্বিতীয় দিনেও কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: নাজমুস সাকিব
দ্বিতীয় দিনেও কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: নাজমুস সাকিব

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে আবার সেই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে গ্রাহকদের। মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ঈদে বাড়ি ফেরার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না—আজ মঙ্গলবার এমন অভিযোগ করেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীরা। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।

আজ ভোর থেকে চেষ্টা করেও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিটের দেখা না পাওয়া গ্রাহকদের একজন মোহাম্মদ ইব্রাহিম অন্তর। বাধ্য হয়ে তিনি রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাবেন কি না, সে ব্যাপারেও আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি তিনি।

প্রথম আলোকে অন্তর বলেন, ‘গতকাল রাতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমি যাব দিনাজপুরে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের চারটি টিকিটের জন্য লাইনে থেকেই ভোর পাঁচটার পর অ্যাপসে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে যখন ওকে করতে যাব, তখন থেকেই বাফারিং শুরু হয়েছে। বাফারিং হচ্ছে তো হচ্ছেই। আর তখন থেকেই টানা দুই ঘণ্টা একই অবস্থা মোবাইল অ্যাপসের। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একবার অ্যাপসে ঢোকা গেল। কিন্তু যখন গন্তব্যস্থল নির্বাচন করতে যাব, তখনই সব বন্ধ হয়ে গেল।’

একই পরিস্থিতির সম্মুখীন মোহাম্মদ পলাশ আহমেদ নামের আরেক যুবক। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে তো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অ্যাপ কাজ করছে না। আমার মতো আরও কয়েকজনকে নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের তথ্যকেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে বলা হলো, অনেকেই তো মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট পাচ্ছেন। আপনি কেন পাচ্ছেন না? তখন আমরা তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করি, কারা টিকিট পাচ্ছেন, আপনি একটু দেখান। তখন তিনি আর কোনো কথা বলেননি।’

এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে অ্যাপে সবাই একবারে টিকিট কেনার জন্য ঢুকছেন। তাই দ্রুত টিকিট ফুরিয়ে গেছে। তা ছাড়া একসঙ্গে অনেকে টিকিটের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করায় সার্ভার স্লো হয়ে যায়। এ কারণে সবাই তো আর টিকিট কিনতে পারবে না।’

কতজন অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কিনেছেন—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে এই মুহূর্তে এ তথ্য নেই। পরে জানাতে পারব।’

আজ অনেকে অ্যাপের মাধ্যমে বা অনলাইনে ট্রেনের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করলেও গতকাল সোমবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘গত ঈদে অভিযোগ ছিল, অ্যাপ অনলাইনে টিকিট কাটা যাচ্ছে না। এবার পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে।’

আগামী ৮ আগস্টের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে আজ। মূলত, এদিন থেকেই ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে পারে। সে কারণে আজ টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল গতকালের চেয়ে অনেক বেশি। পুরো কমলাপুর স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত ঘরমুখী মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। আর ৮ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত চার দিনেই বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। কিন্তু ৮ আগস্টের টিকিট বিক্রির দিনটিতেই আবারও সেই মোবাইল অ্যাপে অনলাইনে টিকিট কিনতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হলো অসংখ্য মানুষকে।

অথচ রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ মোবাইল ফোন অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করা হবে।

মোবাইল অ্যাপে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা গত ঈদের আগে চালু করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও সার্ভার–জটিলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেও টিকিট কাটতে পারেননি অসংখ্য মানুষ।