রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

রাজশাহী
রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে এসেছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ২০ জন ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। এখনো ৩৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন।

ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা রোগীদের কারণে রাজশাহীর মানুষের ঝুঁকি বাড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীকে অন্য কোনো মশায় কামড় দিলে সেই মশাও ডেঙ্গু রোগের জীবাণু বহন করবে। মশাটি অন্য একজন সুস্থ মানুষকে কামড় দিলে তিনিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন। 

আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকেই রোগীদের সরবরাহ করা হয়েছে মশারি। রোগীদের সব সময় মশারির নিচেই থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক রোগীই বিষয়টি মানছেন না। ফলে নতুন করে রাজশাহীতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রোগীর আশপাশে থাকা মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুলাই থেকে এখানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছেন। গতকাল পর্যন্ত মোট ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩৩ জন রোগী। তাঁদের মধ্যে গত রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একজন পুলিশ কনস্টেবল ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই এসেছেন ঢাকা থেকে।

হাসপাতালের ১৭ নম্বর কেবিনকে ‘ডেঙ্গু কর্নার’ করেছে কর্তৃপক্ষ। এখানে গতকাল দুপুরে তিনজন রোগী ভর্তি দেখা যায়। তাঁদের কেউই মশারি টাঙাননি। চার দিন ধরে এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল হাসিব গালিব। তাঁর বাড়ি পাবনা। মশারি না টাঙানোর কারণ জানতে চাইলে গালিবের মা ফেলিয়া বেগম বলেন, ‘দিনে মশা নেই। তাই মশারি টানাইনি। তবে সন্ধ্যা হলে মশারি টানাই।’

পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কিশোরী নূর সাজিয়াকেও মশারির ভেতর রাখা হয়নি। শয্যার ওপর মশারি থাকলেও তা এক কোণে জড়ো করে রাখা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে সাজিয়ার মা মুসলিমা খানম বলেন, শয্যার ওপর ফ্যান নেই। ফ্যানটা একটু দূরে। মশারি টাঙালে বাতাস লাগে না। তাই মশারি টাঙাচ্ছেন না। তবে রাতে মশা লাগলে মশারি টাঙান। সাজিয়া ভর্তি আছেন পাঁচ দিন ধরে।

হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। সেখানে গিয়ে ছয়জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ওয়ার্ডের ভেতরে তিনজনকে মশারির ভেতর দেখা যায়। বাইরের বারান্দায় আরও একজনকে মশারির ভেতর শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে অপর দুই রোগী মশারি না টাঙিয়েই শুয়ে ছিলেন। হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েও একজন রোগীকে মশারি না টাঙিয়েই শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

তবে হাসপাতালেরই আইসিইউয়ের চিকিৎসক মনিরুল ইসলামকে ১৭ নম্বর কেবিনে মশারি টাঙিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। এই চিকিৎসক বলেন, সব এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে না। কেবল আক্রান্ত রোগীকে কামড় দেওয়ার পরই এডিস মশা এই জীবাণু বহন করে। তাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীরই মশারির নিচে অবস্থান করা উচিত। তা না হলে এডিস মশা তাঁকে কামড় দেওয়ার পর যদি একজন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় তবে তিনিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসার পরই আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। ছয় দিন ধরে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডেঙ্গুর জীবাণু সাধারণত শরীরে সাত দিন সক্রিয় থাকে। তবে এই ছয় দিনেই আমাকে অন্তত ৩০টি ইনজেকশন নিতে হয়েছে। আমার সেবাযত্নের জন্য পরিবারের সদস্যরা আছেন। আমি চাই না, আমার পরিবারেরও কেউ এতে আক্রান্ত হোক। বিশেষ করে শিশুরা এই ৩০টি ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাই সতর্ক আছি। সব সময় মশারির ভেতরেই থাকছি।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগীর মশারির ভেতর না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পরপরই আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে মশারি সরবরাহ করেছি। তাঁদের সব সময় মশারির ভেতরেই থাকতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ডের নার্সদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব রোগীই যেন মশারির ভেতর থাকেন সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। তবে আমরা দেখেছি, হাসপাতালের আশপাশে এডিস মশা নেই।’

উপপরিচালক বলেন, ‘সামনে ঈদ। অনেক মানুষ ঢাকা থেকে আসবে। তখন হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছি। আজ (সোমবার) আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরেকটি ওয়ার্ড বৃদ্ধি করেছি। ইতিমধ্যে মেডিসিন বিভাগের সব অধ্যাপককে নিয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’