বন্যায়, নতুন করে বিপাকে পাবনায় খামারিরা

বন্যার পানির মধ্যে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গরুগুলোকে। পাশাপাশি রয়েছে গো–খাদ্যের সংকট। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার পাইখন্দ গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
বন্যার পানির মধ্যে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গরুগুলোকে। পাশাপাশি রয়েছে গো–খাদ্যের সংকট। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার পাইখন্দ গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

একদিকে গো–খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অপর দিকে দুধের দাম নেই। এ পরিস্থিতিতে পাবনার বেড়া উপজেলার খামারি ও কৃষকেরা গরুগুলো নিয়ে ছিলেন চরম বিপাকে। এরই মধ্যে বন্যা তাঁদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যার পানিতে কয়েক দিন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখায় গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ উঁচু জায়গায় গরুগুলো নিয়ে আশ্রয় নিলেও অসুস্থতার কারণে গাভিগুলোর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা যেমন কমেছে, তেমনি ষাঁড়গুলোও হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যহীন। 

কৃষক ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পানি ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। কিন্তু গরু নিয়ে দুর্ভোগ তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। অনেকের বাড়িতে থাকা গো–খাদ্য বন্যার পানিতে পচে বা ভেসে গেছে। এ অবস্থায় গরু পালনকারীদের বেশির ভাগই গো–খাদ্য জোগাড় করতে পারছেন না। গো–খাদ্যের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।

বন্যাকবলিত বেশির ভাগ বাড়ি এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি। এ কারণে গবাদিপশু নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া অনেক পরিবার এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। কয়েক দিন ধরে বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেক গরু। অসুস্থ গরুগুলোকে ঠিকমতো চিকিৎসা করানো তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় খাবারও দিতে পারছেন না খামারি ও কৃষকেরা।

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ–সংলগ্ন বেড়া পৌর এলাকার মোহনগঞ্জ বাজারের পাশে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে তারা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তবে এ নিয়ে তারা যতটা না বিচলিত, তার চেয়ে বেশি বিচলিত তাদের গরুগুলো নিয়ে। প্রতিটি পরিবারের সঙ্গেই রয়েছে ৫ থেকে ১৫টি করে গরু।

একটি পরিবারের প্রধান ফজু মোল্লা বলেন, ‘আমার পাঁচটা গরু। টানা চার দিন বন্যার পানিতে গরুগুল্যা দাঁড়ায়া ছিল। এরই মধ্যে নদীভাঙনে গোটা বাড়ি যমুনায় চইল্যা গেলি এইখানে আইস্যা উঠছি। চার দিন গরুগুল্যা পানিতে থাকায় সেগুল্যা অসুস্থ হয়া পড়িছে। তিনটা গাভি কয়েক দিন আগেও দৈনিক ৩০ লিটার দুধ দিত। এখন ১০ লিটার কোনো রকমে হয়।’

এদিকে কোরবানির হাট সামনে রেখে যেসব কৃষক ও খামারি ষাঁড় পালন করেছিলেন, তাঁরা রয়েছেন লোকসানের আতঙ্কে। কারণ, পশুগুলো অসুস্থ হওয়ায় ও ঠিকমতো খাবার দিতে না পারায় সেগুলো শীর্ণকায় হয়ে পড়েছে। ফলে কোরবানির হাটে সেগুলোর প্রত্যাশিত দাম মিলবে না বলে তাঁদের আশঙ্কা। এ ছাড়া কোনো কোনো গরু পালনকারী বন্যার কারণে ঘরে গরু রাখতে না পেরে সেগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে গরুর দাম হঠাৎ করেই কমে গেছে। 

সম্প্রতি দুধে অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত হওয়ার পর দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো দুধ নেওয়া বন্ধ করায় স্থানীয় বাজারে দুধের দাম অনেক কমে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন খামারি ও কৃষকেরা। এখন বন্যার কারণে খামারিরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। 

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরচন্দ্র সাহা বলেন, ‘বন্যায় আক্রান্ত অসুস্থ গরুগুলোর জন্য আমরা তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা বন্যাকবলিত এলাকার ১ হাজার ১০০ গবাদিপশুকে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক দিয়েছি।’