বগুড়ায় বন্যায় ক্ষতি অনেক, ত্রাণ অপ্রতুল

বগুড়ায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী জনপ্রতি ৩ কেজি করে চাল এবং নগদ সাড়ে ৪ টাকা করে পাবেন। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী ও শেরপুর উপজেলার ২৮৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

সরকারি হিসাবে, জেলায় বন্যাদুর্গতের সংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৪ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৭৬৪টি। দুর্গতদের সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত ত্রাণ বরাদ্দ মিলেছে ৯২২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে মাথাপিছু বরাদ্দ মিলেছে ৩ দশমিক ১৮ কেজি চাল এবং নগদ ৪ টাকা ৫৭ পয়সা। এর বাইরে ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মণ্ডল বলেন, বন্যাদুর্গত প্রতিটি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা হিসেবে এককালীন ১৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৬৯ হাজার ৭৬৪ পরিবারের জন্য ১ হাজার ৪৭ মেট্রিক টন চাল দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত বরাদ্দ মিলেছে ৯৭৭ মেট্রিক টন ৫০০ কেজি। সব পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে আরও ১২৪ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন। অবশিষ্ট চাল দু-এক দিনের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ দিন ধরে দুর্ভোগ পোহালেও এখনো অনেকে ত্রাণ পাননি। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুর্গম ১১টি চরের বাসিন্দারা। চরগুলোর হাজারো মানুষের বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বসত গড়েছেন অনেকেই। অথচ দুই সপ্তাহেও সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। 

চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, তাঁর ইউনিয়নে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ২৭ হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০। এ পর্যন্ত ১৫ কেজি করে সরকারি ত্রাণসহায়তা পেয়েছে ৩ হাজার ১৩৩ পরিবার। ৩০০ পরিবার পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট। ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০০ পরিবার এখনো ত্রাণসহায়তা পায়নি। 

কাজলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহজাহান আলী জানান, তাঁর ওয়ার্ডে দুর্গত পরিবারের সংখ্যা ৪৩০। ১৫ কেজি করে চাল পেয়েছে ৩৩৩ পরিবার। ১০০ পরিবার এখনো ত্রাণ পায়নি। 

কামালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বানভাসি ৫০০ পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ২০০ পরিবার। 

ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা 

জেলায় বন্যায় কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বন্যায় ২৩ হাজার ৩০ হেক্টর পাট, আউশ, মরিচ, আখ, আমনের বীজতলা ও শাকসবজিসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার পানিতে পাট ভেসে গেছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির। এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৬৩৫ কৃষক পরিবারের সব মিলিয়ে ৩১৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৪৯ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট ৩১৪টি জলাভূমির ৯৬ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। খামারি ও চাষিদের ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত জেলায় বন্যাদুর্গত গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও কৃষকের সংখ্যা ৭৫ হাজার। খামার, চারণভূমি ও খাদ্যের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি টাকা। অথচ গত রোববার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খাদ্যসহায়তা হিসেবে সরকারি ত্রাণ মিলেছে ১ লাখ টাকা। সে হিসাবে দুর্গত এলাকায় প্রতিটি পশুর খাদ্যসহায়তায় বরাদ্দ ৫০ পয়সা। আর ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও পশুর মালিকদের মাথাপিছু বরাদ্দের পরিমাণ ১ টাকা ৩৩ পয়সা। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারের বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২৭৮ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ও ১৫টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর বন্যায় দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।