বগুড়ায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

পাট কেটে বানের পানিতে ভাসিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। গত রোববার দুপুরে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামে।  ছবি: সোয়েল রানা
পাট কেটে বানের পানিতে ভাসিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। গত রোববার দুপুরে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: সোয়েল রানা

উজানে যমুনা, করতোয়া, ঘাঘট আর আলাই নদীর স্রোতের তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৭টি স্থান ধসে গেছে। আর বাঁধের এসব ভাঙাস্থান দিয়ে ঢুকে পড়েছে চার নদীর পানি। সেই পানিতে এখন থইথই করছে বগুড়ার মাঠ-ঘাট, বসতবাড়ি। পাকা সড়কে বইছে পানির স্রোত। বেশ কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছে চারজন। বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ট্রেন যোগাযোগ। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বগুড়ার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ষাটের দশকে যমুনা নদীর পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র ডান তীর বাঁধ বা বিআরই নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের ৭৬ কিলোমিটার পাউবোর গাইবান্ধা এবং ৪৫ কিলোমিটার অংশ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এ বছর যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বগুড়ার ৪৫ কিলোমিটার অংশের ৪২টি টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে অল্প করে পানি ঢুকতে শুরু করে। 

পাউবোর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ইঁদুরের গর্তসহ নানা কারণে বাঁধের যেসব স্থানে পানি চুঁয়ে বের হচ্ছিল, সেসব স্থান পাইলিং করা ছাড়াও বালুভর্তি চটের ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ, জিও টেক্স ব্যাগ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। ফলে বড় রকমের ক্ষতি হয়নি। তবে উজানে গাইবান্ধা অংশে বিআরই বাঁধের ১৪টি স্থানে ধসে যমুনার পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া ঘাঘট নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ৪টি স্থানে, আলাই নদীর ডান তীরে সোনাইল বাঁধে ১৪টি এবং করতোয়া নদীর নুরুল্লাহ বিল প্রকল্পের বাঁধের তিনটি স্থানে ধসে যায়। এতে করে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি এবং শেরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। 

পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বগুড়া-পাকুল্যা এবং সোনাতলা-গাইবান্ধা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সোনাতলা উপজেলার বন্যা কবলিত বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঙালি নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। সেই ঢলে প্লাবিত এই উপজেলার ৮৪টি গ্রাম। দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। পানিতে পড়ে মারা গেছে দুজন। 

 সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর আলম বলেন, গাইবান্ধায় বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়া নদীর পানিতে এই উপজেলার সিংহভাগ গ্রাম তলিয়ে গেছে। 

শ্রেণিকক্ষ জলমগ্ন হওয়ায় ২৯টি স্কুল-কলেজ এবং ৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ১৩০ হেক্টর খেতের ফসল। হাজার খানিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানিতে ভাসছে গোটা সোনাতলা উপজেলা। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পানি। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরও। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে যমুনা নদীর পানি বাড়ায় নদীপাড়ের কিছু গ্রাম এবং দুর্গম চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু গত তিন চার দিন ধরে বাঙালী নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে জোড়গাছা, মধুপুর, তোকানী চুকাইনগর, পাকুল্যা, বালুয়া এবং সদর ইউনিয়ন এবং সোনাতলা পৌরসভাসহ গোটা উপজেলার জনপদ হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। বসতবাড়িতে আকস্মিক পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বানভাসি হাজারো মানুষকে। 

মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অসীম কুমার জৈন প্রথম আলোকে বলেন, গাইবান্ধায় বাধভাঙা ঢলের পানিতে তাঁর ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩০০ পরিবার পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী।