পরীক্ষা-পাঠদান বারান্দায়, নেই শৌচাগার-নলকূপ

শ্রেণিসংকটে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো
শ্রেণিসংকটে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ইকরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাটি ও টিনের ছাউনির জরাজীর্ণ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেই প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ। এই বিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টিতে দুই পালায় পাঠদান হলেও শ্রেণিকক্ষের সংকটে শিক্ষার্থীদের বারান্দার মেঝেতে বসে পড়ালেখা ও পরীক্ষা দিতে হয়।

এ ছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো শৌচাগার ও নলকূপ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতীয়করণ হয় ২০১৪ সালে। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক পাঁচজন। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী ১৮২ জন। এখানে শিক্ষার্থীদের দুই পালায় পড়ানো হয়। প্রথম পালায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশুশ্রেণি, প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে। বিদ্যালয়টির তিনটি শ্রেণিকক্ষ থাকায় শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের বারান্দার মেঝেতে বসে পড়ালেখা করতে হয়। দ্বিতীয় পালায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে। ছোট ছোট শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত বেঞ্চ-টুল রাখার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় শিক্ষার্থীদের একই বেঞ্চে গাদাগাদি করে কিংবা দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়।

এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো শৌচাগার (টয়লেট) নেই। পানি খাওয়ার জন্য নেই কোনো নলকূপ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অফিসকক্ষসহ চারটি কক্ষ রয়েছে। ওই দিন দুপুরে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় টিনের ছাউনির নিচে এবং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত টিকরামপুর আদিবাসী ক্লাবঘরের বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমে শিশুদের অনেকেই হাঁসফাঁস করতে থাকে। অনেকেই গরম সহ্য করতে না পেরে পরীক্ষা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আবার বসে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের মাটির দেয়ালের অনেক জায়গায় মাটি খুলে পড়ছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনে ছাউনি দেওয়া টিনগুলো মরচে পড়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ছাউনির টিনগুলোতে ফুটো হয়েছে।

বারান্দায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষকেরা জানান, শিক্ষা অফিসের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচটি শ্রেণির পরীক্ষা একই দিনে (২৮ এপ্রিল) ও একই সময়ে থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ থাকায় বিদ্যালয়ের বারান্দা ও গ্রামের একটি ক্লাবঘরের বারান্দায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে হয়।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জলি, আলিয়া, সুমনা, এক্কা ও ফুরকান জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোনো নলকূপ নেই। প্রচণ্ড গরমে পিপাসা পেলে তাদের খুব কষ্ট হয়। পানি খেতে যেতে হয় প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গ্রামের ভেতর।

শিক্ষিকা সারথী টপ্প বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই দেখছি, এখানে কোনো টয়লেট নেই। টয়লেটের প্রয়োজন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গ্রামের মানুষের বাড়িতে যেতে হয়। আধুনিক যুগে এই সমস্যার কথা চিন্তা করা যায় না।’

গত এপ্রিল মাসে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন রেজাউল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ১২ বছর আগে মাটি ও টিনের ছাউনির তৈরি বিদ্যালয়টির অবকাঠামো বর্তমানে খুবই নাজুক। মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। দুই পালায় পাঠদান কার্যক্রম চললেও সারা বছরই শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে ক্লাস করতে হয়। অফিসকক্ষটিও খুব ছোট হওয়ায় বিভিন্ন সরঞ্জাম ও শিক্ষা উপকরণ ঠাসাঠাসি করে রাখতে হয়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির নাজুক অবকাঠামো ও শ্রেণিকক্ষ-সংকটের বিষয়ে আমরা অবহিত। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।