রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা সদরুল কারাগারে

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বনানীর এফ আর টাওয়ার নির্মাণে নকশা জালিয়াতি মামলায় গ্রেপ্তার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস আজ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, এফ আর টাওয়ার নির্মাণে নকশা জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা সদরুল আলম। তাঁর পক্ষ থেকে আদালতের কাছে দাবি করা হয়, তিনি অসুস্থ। তবে দুদকের পক্ষ থেকে তিনি এই জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আসামি সদরুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে এই মামলায় গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে সদরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বনানীর এফ আর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৫ জুন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদিম, টাওয়ারের জমির মালিক এস এম ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। এর পরপরই ভবনটির নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে।

আগুন লাগার ঘটনায় করা মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। তিন আসামি হলেন, এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল এবং এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপির নেতা তাসভির উল ইসলাম। এঁদের মধ্যে এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভির উল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মামলাটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই মামলায় তিনজনই এখন জামিনে আছেন।

এফ আর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়মের ঘটনায় গঠিত গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের তদন্ত কমিটি অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে দায়ী করেছে। ২২ মে গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই দিন তিনি বলেন, এফ আর টাওয়ারের নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। শুধু তা-ই নয়, অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটির ১৯ থেকে ২৩ তলা। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন খাদেমসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে নির্মিত ১৯ থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হবে। আর ১৬ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনি ত্রুটি থাকায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রণায়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ভবন নির্মাণের অনিয়ম ও ত্রুটিতে যেসব ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদেম , রাজউকের সাবেক সদস্য ডি এম ব্যাপারী, রাজউকের সাবেক নগর-পরিকল্পনাবিদ জাকির হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান, সাবেক অথরাইজড অফিসার-২ সৈয়দ মকবুল আহমেদ, সাবেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ উল্লাহ এবং জমির মূল মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, সাবেক অথরাইজড অফিসার এ টি এম কামরুজ্জামান, সাবেক অথরাইজড অফিসার নাজমুল হুদা, সাবেক সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. বদরুজ্জামান মিয়া, সাবেক সহকারী অথরাইজড অফিসার বশির উদ্দিন খান, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মুহাম্মদ আবদুর রহমান, উচ্চমান সহকারী (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সফিউল্লাহ, নিম্নমান সহকারী মো. মজিবুর রহমান (সাময়িক বরখাস্ত), সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, বিষয় পরিদর্শক মো. মেহেদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক (এখন সাবেক) শাহ মো. সদরুল আলম, উপপরিচালক মুহাম্মদ শওকত আলী (প্রেষণ), পরিচালক শামসুল আলম (প্রেষণ), সদস্য (এস্টেট) রাজউল করিম তরফদার, তত্ত্বাবধায়ক মোফাজ্জল হোসেন, তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. এমদাদ আলী বিশ্বাস (মৃত), পরিচালক আবদুল্লাহ আল বাকি, সদস্য আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক, তৎকালীন ইমারত পরিদর্শক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।