আমদানিকারকদের কারসাজি কি না দেখা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

পাস্তুরিত দুধ নিয়ে দেশে চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর পেছনে গুঁড়া দুধ আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটি দেখা উচিত।

মঙ্গলবার সকালে লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার ও গণপিটুনি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পাস্তুরিত দুধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না হঠাৎ করে একজন প্রফেসর সাহেব কী পরীক্ষা করে বলে দিলেন, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। তা নিয়ে আদালতে রিট করা হয়। বলে দেওয়া হয় দুধ ব্যবহার করা যাবে না।’ তিনি বলেন, একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে প্রকৃত ফলাফল কী হবে, তা চিন্তা করা হয় না। দুধ বিক্রি করে যে মানুষটা তার জীবিকা নির্বাহ করে, দুধ বিক্রি করে ওই গরুর খাবারও কেনা হয়। যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, গরুকেই বা কী খাওয়াবে, নিজেরাই বা কীভাবে চলবে। এ বাস্তবতা চিন্তা করা একান্ত দরকার। দেশে উৎপাদিত প্রতিটি খাদ্যপণ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, যিনি দেশের দুধ পরীক্ষা করেছেন, তিনি কখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা দুধ পরীক্ষা করেছেন কি না। আমার তো মনে হয়, করেননি। সেগুলো একটু পরীক্ষা করে দেখেন। আমরা আমদানিনির্ভর থাকতে চাই না, নিজেরা উৎপাদন করতে চাই। তাই গুঁড়া দুধ আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি এখানে আছে কি না, সেটিই এখন দেখা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গবাদিপশুকে রোগমুক্ত রাখতে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। সে ক্ষেত্রে দুধে কিছুটা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি থাকতে পারে। একজন মা যদি অ্যান্টিবায়োটিক খান, মায়ের দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক থাকতে পারে। তা ক্ষতিকর পর্যায়ের না হলেই হয়।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতন হওয়ার আহ্বান
ডেঙ্গু প্রতিরোধে দেশবাসীকে সচেতন হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু সাধারণত শহর এলাকায় ছিল। এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ, যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বা যাদের শরীরে ভাইরাস রয়ে গেছে, তারা নিজেদের এলাকায় গেলে এডিস মশার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হতে পারে।

ভাষণে মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য দেশবাসীকে তাদের বাড়িঘর এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে সতর্ক করে বলেন, কোথাও যেন বৃষ্টির পানি জমতে না পারে। ডোবা-নালায় যেন এডিস মশা বিস্তার লাভ করতে না পারে, সে ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সরকারি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীকেও পরিচ্ছন্নতা কাজে নামার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি।

গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব ও গণপিটুনিতে সম্প্রতি কয়েকজন মারা গেছেন। বিষয়টি সামনে রেখে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ গুজবে কান দেবেন না। দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। গুজব ছড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করা বড় অপরাধ। যারা গুজব ছড়ায়, তাদের ধরিয়ে দিন। অহেতুক ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গুজব ও মিথ্যা তথ্য যারা ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গুজব শুনে কোনো নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলা গর্হিত কাজ, এটা হত্যাকাণ্ডের শামিল।

বন্যা মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে দেশে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। যেহেতু এখন বর্ষাকাল, উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেমন, দলের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। নদীকে রক্ষা করতে হলে একান্তভাবে ড্রেজিং করা দরকার, নাব্যতা ধরে রাখতে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। নদীর প্রবাহ বাড়লে বন্যা কমবে, ভাঙনও রোধ হবে। শুষ্ক মৌসুমেও পানির ঘাটতি কমবে।’

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা সভায় অংশ নেন। ওই সভায় ফোনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রমুখ।