ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগে মানুষ

তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন পাহাড়তলী এলাকার নুরুল ইসলাম। চারদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় তাঁর মধ্যে ভয় ধরে যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি ছুটে যান সদরঘাটের সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা চলছে। কিন্তু রক্ত নেওয়ার সময় তিনি ভয়ে কাঁপছিলেন। চিকিৎসক তাঁকে আশ্বস্ত করেন, আপনার তো এখনো ডেঙ্গু নিশ্চিত হয়নি। তবু কেন এ রকম করছেন?

চিকিৎসকের অভয়বাণীও তাঁকে আতঙ্কমুক্ত করতে পারেনি। ঘণ্টাখানেক পর যখন পরীক্ষার রিপোর্টে নেগেটিভ আসে তখন নুরুল ইসলাম নিশ্চিন্ত হন। এ রকম ডেঙ্গু আতঙ্ক এবং উদ্বেগে ভুগছে চট্টগ্রামের মানুষ। চারদিকে কেবল ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা। একই ভবনের চারজন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। জ্বর হলেই মানুষ ছুটছে চিকিৎসকের কাছে।

গতকাল চট্টগ্রামে নতুন করে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট ডেঙ্গু রোগী দাঁড়াল ১৪১ জনে। শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ২০ জন রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে একজন, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চারজন, ইউএসটিসিতে একজন, রয়েল হাসপাতালে একজন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দুইজন, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজে একজন, ইসলামিক কলেজ মেডিকেল হাসপাতালে একজন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আজ (মঙ্গলবার) ২০ জন ভর্তি হয়েছে। আমরা ডেঙ্গু ব্লক করে দিয়েছি। এ ছাড়া প্যাথলজিতে ডেঙ্গু পরীক্ষাও হচ্ছে বিনা মূল্যে। তবে ডেঙ্গু কীটখুব কম দেওয়া হয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

জনমনে উদ্বেগ
সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে সকাল নয়টা থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু হয়। নন্দনকানন থেকে আসা কলেজছাত্র মো. মোরশেদ এক দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তাই ভয়ে পরীক্ষার জন্য চলে আসেন। মোরশেদ বলেন, ‘চারদিকে যেভাবে ডেঙ্গু হচ্ছে, ভয় পাচ্ছি। ঢাকা যাইনি। তবু ভয় পাচ্ছি।’

কলেজছাত্রী তামান্না তাঁর মাকে নিয়ে আসেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। তাঁর মা বলেন, মেয়ে তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তাই খুলশী থেকে এখানে পরীক্ষা করানোর জন্য চলে এসেছি।’

ছেলে নব্য দেওয়ানকে কোলে নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসেন মিন্টু দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে জ্বর কমছে না। গায়ে ব্যথাও আছে। খুব ভয়ে আছি।’

গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে।

চার দিন আগে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চন্দনাইশের জিয়া উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় যাইনি। আমার কর্মস্থল বোয়ালখালী। চট্টগ্রাম শহরেও আসিনি। তবু আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলাম।’

তাঁর পাশের শয্যায় শুয়ে আছেন কলেজছাত্র আসাদুজ্জামান। তিনিও বোয়ালখালীর বাইরে কোথাও যাননি। তবু আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। সীতাকুণ্ডের আবদুল্লাহ আল নোমান ভর্তি হয়েছেন পাঁচ দিন আগে। তিনিও ঢাকায় যাননি।

চমেক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ৭৫ ভাগ রোগী ঢাকায় গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা স্থানীয়। তাঁরা এখানেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

এক ভবনের চারজন হাসপাতালে
নগরের হাজারি লেনের বাসুদেব কমপ্লেক্স নামে একটি ভবনের চারজন বাসিন্দা চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ন্তী দেব (১৩) ও দাদি গীতা দেবকে (৬০) গত রোববার চমেক হাসপাতালের পাশাপাশি শয্যায় ভর্তি করা হয়।

একই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা টিংকু দাশকে (২৩) ভর্তি করা হয় বৃহস্পতিবার। এরপর তাঁর বড় ভাই রাজীব দাশকে (২৫) ভর্তি করা হয় সোমবার। দুজনেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।

প্রিয়ন্তীর বাবা তাপস দেব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বাসার পাশে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভবনের ফুলের টবে পানি জমে থাকে সারাক্ষণ। এ ছাড়া নালাও অপরিচ্ছন্ন। এ জন্য আজ আমাদের এই পরিণতি হলো।’

একই অভিযোগ করেন টিংকু দাশের স্বামী শিমুল দাশ। তিনি বলেন, করপোরেশন পরিষ্কার করে না। আরও কতজন আক্রান্ত হবে তার কোনো ঠিক নেই।