শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ

নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি
নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌতুক দাবির অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বরাবর ডাকযোগে তিনি এ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ১৪ জুলাই তাঁর স্ত্রী লিমানা নাজনীন ডাকযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর এ অভিযোগ পাঠান। লিমানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের প্রাক্তন ছাত্রী।

তবে মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, স্ত্রী তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। এটি তাঁদের একান্তই পারিবারিক বিষয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব অভিযোগ লিমানা করেছেন, তার কোনো সত্যতা নেই। বরং তাঁর বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ আমার রয়েছে। এ ছাড়া আমি সন্তান ও তাঁর ভরণপোষণের জন্যও টাকা দিচ্ছি, অথচ সে এ ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’

অভিযোগে লিমানা লিখেছেন, স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মিজানুর। তখন সস্ত্রীক কানাডা যাওয়ার কথা বলে তাড়াহুড়ো করলে ১৫ দিনের মধ্যে ২০১৭ সালের ৫ মে তাঁদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই মিজানুর উল্টো আচরণ শুরু করেন। জোর করে তাঁর স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। ক্যাম্পাস ও ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি মিজানুর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাঁদের এক বছর পাঁচ মাস বয়সী এক সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই লিমানার কাছে অনবরত যৌতুক দাবি করেন মিজানুর। একাধিক বিয়ের হুমকি এবং স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ না দেওয়ারও হুমকি দেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের পর থেকে তিনি নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে বাবার বাড়ি চলে আসেন। সেই থেকে ওই শিক্ষক কোনো ভরণপোষণও দিচ্ছেন না। এ নিয়ে লিমানা আইন ও সালিশ কেন্দ্রেও একটি অভিযোগ দেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মিজানুরকে ডাকলেও তিনি সাড়া দেননি। এরপর শুধু এক মাসের জন্য সন্তানের ভরণপোষণের টাকা দিয়েছিলেন মিজানুর।

লিখিত অভিযোগের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিমাদ্রী শেখর রায় বরাবরও দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই অভিযোগটি গ্রহণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এটি রেজিস্ট্রার বলতে পারবেন। পারিবারিক সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়, বরং সামাজিক কিংবা আইনি ব্যবস্থা নিলে অভিযোগকারীর পক্ষে ভালো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

লিমানা অভিযোগ নয়, বরং একটি ‘চিঠি’ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাঁদের পারিবারিক বিষয় অবহিত করেছেন দাবি করে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘উনি (লিমানা) উনার অবস্থাটা জানিয়েছেন। উনি চেয়েছেন সমাধান। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার সমাধান তো বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধির সঙ্গে তো কারও ব্যক্তিগত জীবনের নীতিমালা সংযুক্ত নেই।’

আইনের আশ্রয় না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লিমানা নাজনীন বলেন, ‘সংসার টিকিয়ে রাখা ও আমার বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এত দিন সব সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না। শুনেছি, তিনি (মিজানুর) পিএইচডি করতে আমেরিকা চলে যাচ্ছেন। এতে আমার ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি চাইছি, আমার সন্তান তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক। তাই প্রথমে আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তাঁর কর্মস্থলে অভিযোগ পাঠিয়েছি।’