১৫ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ের চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ২২ জনের মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। দুই বছর ধরে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও প্রায় এক বছর ধরে গাইনি চিকিৎসক নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনটিতেই চিকিৎসক নেই। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ মাঠপর্যায়েও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মিজানুর রহমান জানান, ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদ থাকলেও সার্জারি, মেডিসিন, চক্ষু, ইএনটি, অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি, হোমিও ও শিশুসহ আটটি পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তার আট পদের মধ্যে ছয়টি পদই শূন্য। দুই বছর ধরে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি শূন্য থাকায় চিকিৎসক শাহীনুর আলম ওই পদে বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তিনটিতেই কোনো চিকিৎসক নেই।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) তাজমিরা সুলতানা পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। ১১ মাস পার হলেও ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে এ হাসপাতালে প্রসূতিসেবা ব্যাহত এবং গরিব প্রসূতি মায়েরা মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্পের (ডিএসএফ) সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, তাঁর ইউনিয়নের বড়চওনা বাজারে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল অফিসার নেই। ফলে সামান্য অসুখেও রোগীরা এখানে সেবা না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যাচ্ছে। ফলে তাদের ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

উপজেলার কালিদাস গ্রামের আরজিনা বেগম প্রসূতিসেবা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে গাইনি চিকিৎসক না পেয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন তিনি। আরজিনার স্বামী অটো ভ্যানচালক রমজান আলী বলেন, হাসপাতালে সেবা পেলে তার তেমন খরচ হতো না। উল্টো ডিএসএফ প্রকল্প থেকে আড়াই হাজার টাকা পেতেন। ক্লিনিকে নেওয়ায় তার ওষুধসহ ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হয়।

২১ জুলাই দুপুর ১২টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গড়গোবিন্দপুর গ্রামের এক শিক্ষক তাঁর তিন বছরের বাচ্চা নিয়ে এসেছেন। গত এক মাসে দুবার বাচ্চাটির ডায়রিয়া হয়েছে। সে তেমন খাবার খেতে চায় না। একজন চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য এসেছেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, এ হাসপাতালে শিশু বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার খোদেজা বেগম বলেন, ১১ মাস ধরে গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ না থাকায় জরুরি প্রসূতিসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরা সাধারণ ডেলিভারি করাচ্ছেন। একটু জটিল ও সিজারিয়ান রোগীদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা শাহীনুর আলম বলেন, ‘এ পদের কর্মকর্তা আমি নই। তারপরও দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। আমার হাসপাতালে আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করার কথা, অথচ আমাকে এই পদে থাকায় সারা দিনই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।’ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে প্রতিবেদন আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক একজন গাইনি চিকিৎসক দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।