রংপুর মেডিকেলে ডেঙ্গু শনাক্তের যন্ত্রই নেই

রংপুরে এবার স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড় খেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এঁদের সংখ্যা সাতজন। তাঁদের মধ্যে রংপুরের চারজন, নীলফামারীর দুজন ও কুড়িগ্রামের একজন। তাঁরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জন ডেঙ্গু রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। এ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাইরে পরীক্ষা করে তাঁরা এখানে এসে ভর্তি হয়েছেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ঢাকায় সিদ্ধান্ত হতে হয়। এ কারণে পরিস্থিতি মোকাবিলায় গতকাল হাসপাতালে সভা করে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তা কেনা হয়নি।

যে সাতজন রোগী স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তাঁরা হলেন রংপুর নগরের গুপ্তপাড়ার বাসিন্দা রওজাতুল জান্নাত (১৮), কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ এলাকার মেহেদী হাসান (২১), গঙ্গাচড়া উপজেলার উত্তর খলেয়া এলাকার কাঞ্চন মহন্ত (২৫), আলমবিদিতর এলাকার গোলাম রব্বানী (২৫), নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কাজলী রানী (২৪), সৈয়দপুর উপজেলার আজানুর রহমান (৩২) ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সুমী বেগম (২৭)।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯ জুলাই থেকে গতকাল বেলা দুইটা পর্যন্ত ১২ দিনে এ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৪৪ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ৪ জন শিশু। তাঁদের মেডিসিন বিভাগের চারটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের ১, ৩, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একদিকে ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা কর্নার করা হয়েছে। সেখানে মশারি টানিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি তো ঢাকায় যাইনি। তিন-চার দিন থেকে জ্বর। গায়ে ব্যথা। রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারি, ডেঙ্গু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ভুট্টার ব্যবসার কারণে তাঁকে রংপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রতিদিন যেতে হয়। সেখানে ঢাকা থেকে অনেকেই আসেন। তাঁদের শরীর থেকেও মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়ে থাকতে পারে।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চন মহন্ত বলেন, ‘গ্রামে আমাদের পাশের বাড়িতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে লোকজন এসেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।’

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা জানান, ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা হাসপাতালে না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে রোগীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের কেউ বাইরে রোগনির্ণয় কেন্দ্রে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাছেন, আবার হাসপাতালে রোগনির্ণয় কেন্দ্রের লোকজন এসেও রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে মেডিসিন বিভাগের প্রধান দেবেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, চারটি ওয়ার্ডের একদিকে ডেঙ্গু রোগীর জন্য কর্নার করা হয়েছে। তাঁদের হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হয়েছে। এসব রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চার সদস্যের একটি বিশেষ চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে।