২৩৫০ স্কুল-কলেজে বন্যার ক্ষত

বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার পানি। সম্প্রতি জামালপুরের ইসলামপুরের পূর্ব বাবনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার পানি। সম্প্রতি জামালপুরের ইসলামপুরের পূর্ব বাবনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

চলমান বন্যায় দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা ১ হাজার ৫৫৭টি এবং ৭৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত ১২টি জেলায় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪ হাজার ৩৩১টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুকপানি। এতে চেয়ার, বেঞ্চসহ আসবাব ও শিক্ষা উপকরণের ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়া এসব প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় আছে। এর মধ্যে ১ আগস্ট থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার কারণে যেসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না, সেগুলোতে প্রয়োজনে পরে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মাউশির অধীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় ৩২ কোটি ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করে দ্রুত পাঠাতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তারা ১৯টি জেলার তথ্য পেয়েছে। তাতে দেখা যায়, কুড়িগ্রামে সবচেয়ে বেশি—২২৪টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। এরপর বেশি ক্ষতি হয়েছে গাইবান্ধায়। ওই জেলার শুধু সুন্দরগঞ্জেই ৪৫টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, সব তথ্য পাওয়ার পর পানি নেমে গেলে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৫৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া রংপুরে ৫২৯টি, সিলেটে ২৫২, রাজশাহীতে ১৩৫, চট্টগ্রামে ৩৬ এবং ঢাকা অঞ্চলে ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এখন প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ে বুকপানি

প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার ইসলামপুর উপজেলার ডেবরাইপেচ এলাকায় বন্যার পানি ছিল। চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশেই পানি। বিদ্যালয় ভবনের দক্ষিণ পাশের একটি শ্রেণিকক্ষ ভেঙে গেছে। কক্ষের মধ্য দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে।

চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মনির হোসেন আক্ষেপ করে বলছিল, সে কত দিন ধরে স্কুলে যায় না। বাড়িতেও পানি ছিল। তবে বাড়ির পানি নেমে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে লেখাপড়া নেই। কবে স্কুল খুলবে, সেটাও জানে না সে। 

বন্যাকবলিত অনেক প্রতিষ্ঠানেই হাঁটু থেকে বুকপানি রয়েছে। বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলসহ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় আসবাব পানিতে ভাসছে। বিদ্যালয়ের ফাইল ও বইপত্র পানিতে ভিজে গেছে। এ ছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের মাঠে কাদা জমেছে। 

 জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ বিদ্যালয় থেকে পানি এখনো নামেনি। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ক্লাস শুরু করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।

বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি

প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গতকাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের সিতাইঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা ভবনটির নিচতলা থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু চারপাশে বন্যার পানি এখনো রয়ে গেছে।