একে একে ৬ জন নেমে আর ফিরলেন না

নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে নেমে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে নেমে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকের শাটার খোলার জন্য শুরুতে একজন নেমেছিলেন। তাঁর সাড়া না পেয়ে আরেকজন নেমে পড়েন সেপটিক ট্যাংকে। ঘটনার গুরুত্ব না বুঝে এভাবে একের পর এক ছয়জন সেপটিক ট্যাংকে নেমে মারা পড়লেন। বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আজ বুধবার সকালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জাফরপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

গ্রামবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, নিখিল চন্দ্র মহন্ত নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে নেমে তাঁর ছেলে, ভাই, মিস্ত্রিসহ ছয়জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন একজন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকের প্রধান মিস্ত্রি শাহিন আকন্দ (৪৩), মিস্ত্রির সহকারী সিহাব হোসেন (১৮), সজল হোসেন (১৬) ও মুকুল হোসেন (৪৫), বাড়ির মালিক নিখিল চন্দ্র মহন্তের ছেলে প্রিতম চন্দ্র মহন্ত (২০) ও তাঁর কাকাতো ভাই ভুট্ট চন্দ্র মহন্ত (৪৫)। গুরুতর অসুস্থ দিলীপ চন্দ্র মহন্ত (৫৫) নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: প্রথম আলো
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: প্রথম আলো

ওই গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, নিখিল চন্দ্র মহন্তের বাড়িতে একটি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছিল। এক সপ্তাহ আগে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের কাজ শেষ হয়। আজ সকাল নয়টার দিকে মিস্ত্রিরা ট্যাংকের ভেতরের শাটার খুলতে আসেন। প্রথমে মিস্ত্রির একজন সহকারী ট্যাংকের ঢাকনা খুলে নিচে নেমে পড়েন। প্রায় ২০ মিনিটেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রধান মিস্ত্রি ট্যাংকে নামেন। তিনি ট্যাংকের ভেতর পানিতে পড়ে থাকতে দেখেন সহকারীকে। তবে তিনি সহকারীকে উদ্ধার করতে পারেননি। নিজেও ঢলে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করতে নেমে তৃতীয় ব্যক্তিও ট্যাংক থেকে উঠে আসতে পারেননি। এরপর আরও চারজন নামেন। এর মধ্যে মাত্র একজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ছয়জন ট্যাংকের ভেতর মারা যান।

খবর পেয়ে আক্কেলপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে ছয়জনকে মৃত এবং একজন অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের দলটি পরে ট্যাংকের ভেতরে থাকা পানি অপসারণ করে।

আক্কেলপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা বজলুর রশিদ ছয়জনের মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকটিতে মোট সাতজন নেমেছিলেন। ট্যাংকের মুখ এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকায় ভেতর বিষাক্ত গ্যাস জমে। ভেতরে ঢোকার আগে ট্যাংকের ঢাকনা দীর্ঘ সময় ধরে খুলে রাখা উচিত ছিল। বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।