নিঃসঙ্গ এক পেলিক্যান

পেলিক্যানটি হঠাৎ শূন্যে গলা বাড়িয়ে         হাঁ করে চিবুক মেলে ধরল ক্যামেরার সামনে। ছবি: প্রথম আলো
পেলিক্যানটি হঠাৎ শূন্যে গলা বাড়িয়ে হাঁ করে চিবুক মেলে ধরল ক্যামেরার সামনে। ছবি: প্রথম আলো

একঝলক দেখলে পাখির ভাস্কর্য মনে হতে পারে। একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় ছুঁয়ে দেখতেও ইচ্ছে হতে পারে। তবে ছুঁতে গেলেই বিপদ। বিশাল ও বিচিত্র ঠোঁটের একটা প্রচণ্ড আঘাত আসতে পারে মুহূর্তেই। এই পাখির নাম পেলিক্যান। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের পাখি এটি। অনেকে এটিকে গ্রেট পেলিক্যান ও গ্রেট হোয়াইট পেলিক্যান বলেও ডাকে। পেলিক্যান বিচিত্র স্বভাবের পাখি। বিচিত্র বৈশিষ্ট্য আছে শিকার ধরা, খাওয়া ও আকাশে ওড়াতেও। এ দেশে আগে পরিযায়ী পাখি হিসেবে মাঝেমধ্যে কিছু অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যেত।

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আছে এই প্রজাতির একটি পাখি। একদমই নিঃসঙ্গ সে। দীর্ঘদিন আগে পাখিটি তার শেষ সঙ্গীকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে। পার্ক কর্তৃপক্ষের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ভালো আছে গ্রেট পেলিক্যানের এই সর্বশেষ সদস্য। সম্প্রতি ছবি তুলতে গেলে বিচিত্র শারীরিক কসরতও দেখায় সে। ক্যামেরার ক্লিক শুনে তার বিশাল ঠোঁটে অদ্ভুত শব্দ করে জানান দেয় তার বিশালতা। হঠাৎ শূন্যে গলা বাড়িয়ে হাঁ করে চিবুক মেলে ধরে ক্যামেরার সামনে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিরল এক মুহূর্ত। এরা ঠোঁট মেলে দিয়ে হাঁ করলে এদের ঠোঁটের নিচে থাকা থলিটি খুব বড় আকার ধারণ করে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় এই থলির অস্তিত্ব বোঝা যায় না। পুরোপুরি ঠোঁট মেললে অদ্ভুত ভয়ংকর লাগে দেখতে।

সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক সরোয়ার হোসেন খান জানালেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ পাখির দুটি পাখনার অল্প একটু কালো জায়গা ছাড়া পুরো শরীরে দুধ–সাদা রং। তবে ঠোঁটের রং হলদে ও ধূসর। ঠোঁটের দৈর্ঘ্য এক ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ঠোঁটের নিচের থলিটি হলুদ রঙের। এদের বিশাল পাখনা। ফলে আকাশে উড়তে পারে প্রচণ্ড গতিতে। ওড়ার গতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৪৫ মাইল। উড়ন্ত অবস্থায় ২৫ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতা থেকে এরা নিচের পানিতে শিকার দেখতে পায়। পেলিক্যানদের প্রধান খাদ্য মাছ। সুবিধামতো শিকার পেলে প্রচণ্ড গতি নিয়ে এরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিশাল ঠোঁটে পানিসহ শিকার তুলে নেয়। পরে শিকারের সঙ্গে উঠে আসা পানি ঠোঁটের ফাঁক গলে ফেলে দেয়।

নিঃসঙ্গ পাখিটির জীবন কেটে যাচ্ছে এভাবেই। পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাখিটির একটা সঙ্গী দরকার। তবে কবে সেই সঙ্গী আসবে, তা জানা নেই কারও।