সরকারকে বিপদে ফেলতেই স্বার্থান্বেষী মহলের গুজব: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারকে বিপদে ফেলতেই প্রাণঘাতী গুজব ছড়িয়েছে স্বার্থান্বেষী মহল। গুজব প্রতিরোধে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, সেখানে আমরা “সার্ভিস প্রোভাইডার”দেরও যুক্ত করছি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও এখানে দায়বদ্ধতা রয়েছে।’

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘গুজব শনাক্ত ও সত্য তথ্য প্রচারের মধ্য দিয়ে গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ’ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপ্রধান ও প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নানা বিষয়ের ওপর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রথমে গুজব ছড়ানো হয় পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে। এই গুজবটি ছড়াতে লন্ডন থেকে দেওয়া পোস্টে লেখা ছিল সরকারি অনুমোদন নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য এক লাখ শিশু বলি দিতে হবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার’ উল্লেখ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই সেই পোস্ট দেওয়া হয়েছিল, যা একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘সে পরিপ্রেক্ষিতে ছেলেধরা আতঙ্ক তৈরি হয় এবং ছেলেধরা আতঙ্কের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক জায়গায় কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী আইন হাতে তুলে নিয়ে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেগুলোর ব্যাপারে হত্যা মামলা হয়েছে এবং যারা এই কাজে অংশগ্রহণ করেছে, তারা সবাই হত্যা মামলার আসামি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে সেই গুজব নিরসন হওয়ার পরপরই আবার কয়েক দিন আগে আরেকটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, বিদ্যুৎ থাকবে না। বিদ্যুৎ না থাকলে ছেলেধরা আতঙ্ক। সেই গুজবটাও যখন আমরা জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, তখন আরেকটি গুজব ছড়ানো হলো যে বেসিনের মধ্যে হারপিক, ব্লিচিং পাউডার, কেমিক্যাল ঢেলে দিলে ডেঙ্গু মশা নিধন করা সম্ভব হবে। এটিও অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে। সেটি নিরসনেও সরকার সক্ষম হয়েছে । গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই গুজবগুলো নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি।’

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো শুধু আমাদের দেশের নয়, অনেক দেশেরই সমস্যা’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করাকে সেই দেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করে। তারপরও এ ধরনের কর্মকাণ্ড সেখানেও হচ্ছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে। এটা মহা-অনভিপ্রেত, বিব্রতকর, দুঃখজনক। আনএডিটেড প্ল্যাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। সে জন্য আমি গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। সর্বোপরি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যদি এইভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কোনো পোস্ট দেয়, সেটির বিরুদ্ধে যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আমরা সোচ্চার হই। তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই গুজব নিরসন করা সম্ভব হবে।’

হাছান মাহমুদ মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যাঁরা সার্ভিস প্রোভাইডার, তাঁদেরও দায়বদ্ধতা আছে। তাঁদেরও গুজব নিরসনে যুক্ত হতে হবে। আমাদের এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। যদি কেউ ফেসবুকের মাধ্যমে গুজব ছড়ায়, সেখানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা আছে। ইউরোপে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপে তারা যেভাবে এই কাজগুলো করছে, আমরা একইভাবে এই কাজগুলো করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’