দুই দিনে ৯ প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা

আদালত
আদালত

ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষায় বাড়তি ফি নেওয়ার অভিযোগে গত দুই দিনে রাজধানীর নয়টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও র‍্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ল্যাব সায়েন্স ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, ধানমন্ডি ক্লিনিক, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, বাঁধন হাসপাতাল, আল আরাফাত হাসপাতাল এবং ইসলামী ব্যাংক স্পেশালাইজড হাসপাতাল।

ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষায় বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ল্যাব সায়েন্স ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, ধানমন্ডি ক্লিনিক এবং গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তলব করে। শুনানির পর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ায় অভিযান চালিয়ে বাঁধন হাসপাতাল ও আল আরাফাত হাসপাতালকে ৪০ হাজার করে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, এসব হাসপাতালে রক্তের এনএসওয়ান, সিবিসি, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষায় বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুনানি শেষে প্রমাণ পাওয়ায় জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার-নির্ধারিত ফির বেশি নেওয়া ও অস্ত্রোপচার কক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়ায় ইসলামী ব্যাংক স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে এই জরিমানা করা হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায়। সে সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ আসে। ওই দিনই ডেঙ্গু রোগ শনাক্তে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগের শুনানি শেষে ল্যাবএইড ও ইবনে সিনা হাসপাতালকে যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাবএইড হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেদিন নির্দেশনা এল, সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আমরা তা বাস্তবায়ন করি। কিন্তু সফটওয়্যার আপডেট নিতে সময় লাগে। দু-একটি সমস্যা থেকে গিয়েছিল। সফটওয়্যার আপডেটরত অবস্থাতেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হাসপাতালে আসে। যাঁদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ফোন করে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমরা শুনানিতে গিয়ে সব প্রমাণ দেখিয়েছি। প্রমাণ দেখানোর পরও আমাদের জরিমানা করা হয়েছে।’
গত রোববার ডেঙ্গু শনাক্তের সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান-এর জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, সিবিসির জন্য ৪০০ টাকা এবং আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে।

আরও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা
এদিকে পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেওয়া ও চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে এই জরিমানা করেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ফকিরাপুল এলাকায় আপন মেডিকেল সেন্টারে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হতো পরীক্ষার রিপোর্ট। এমনকি তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। এই দুই অপরাধে আপন মেডিকেল সেন্টারকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করা এবং কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে মেডিকাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। একই দিনে পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেওয়ার অপরাধে ফকিরাপুল এলাকার সোহাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।