শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার বাড়ছে না

ছয় বছর ধরে দেশে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার একই জায়গায় থেমে আছে। ২০১১ সালে ৬৪ শতাংশ শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ পান করত। এই হার ২০১৭ সালে এসে ৬৫ শতাংশ হয়েছে।

এ তথ্য বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) ২০১১,২০১৪ ও ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, ২০১১ সালে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। ২০১৭ সালে হয়েছে ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের জরিপ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

ছয় বছরে শিশুকে (ছয় মাস পর্যন্ত) বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ পয়েন্ট। এর কারণ হিসেবে শিশু পুষ্টিবিজ্ঞানী এম কিউ কে তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতাবিষয়ক প্রচার-প্রচারণা আগের মতো নেই। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করাও কমে গেছে। শিশু জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ পান করানো নিশ্চিত করতে হবে। নইলে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর প্রবণতা বাড়বে না বলে জানান তিনি।

সূত্র: বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ
সূত্র: বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ

রওশন আরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কর্মস্থলে দিবাযত্ন কেন্দ্র না থাকায় চার মাসের পর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর তেমন সুযোগ হয়নি তাঁর। বুকের দুধ খেয়ে শিশুর পেটে ব্যথা হয় মনে করে তিন মাস পর শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন গৃহিণী হালিমা বেগম। আবার হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত এক মা ভয়ে শিশুকে এক দিনও বুকের দুধ খাওয়াননি। অথচ মায়ের দুধের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ে অপুষ্টি কমাতে মাতৃদুগ্ধবিষয়ক প্রশিক্ষণ, পুষ্টিবিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের প্রসবপূর্ব সেবা দেওয়ারও প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এসব কর্মসূচির কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুষ্টি নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েক ব্যক্তি জানালেন। তাঁরা বলছেন, শিশুর জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধের বিকল্প নেই। এ সময় মাতৃদুগ্ধ পান না করালে শিশুর অপুষ্টিসহ নানা ধরনের সমস্যা হয়। মায়েরও শারীরিক ক্ষতি হয়।

>শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার বাড়ছে না
মধ্যে আরও কমেছিল
অসচেতনতা ও প্রচার-প্রচারণা কম, তাই এমনটা হচ্ছে

নানা ধরনের কর্মসূচি থাকার পরও মাতৃদুগ্ধ পানের হার কেন বাড়ছে না—এই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের প্রবণতা ইতিবাচক। তবে সচেতনতার অভাবে অনেক মা শিশুর বয়স তিন মাস হলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। তা না হলে এই হার ৯০ শতাংশ হতো।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকে পুষ্টিসেবা কার্যক্রমে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় অবশ্য বলেন, শিল্পায়নসহ দেশের কর্মক্ষেত্রে যে ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, তাতে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার আরও কমে যাওয়ার কথা ছিল। এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশের মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার সন্তোষজনক।

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বাংলাদেশে সপ্তাহব্যাপী বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে মাতা-পিতাকে উৎসাহিত করুন’।