চোখের সামনে শঙ্খে বিলীন ঘর

শঙ্খ নদে বিলীন হয়ে গেছে পাকা দুটি ভবন। পাশের বসতঘরগুলোও রয়েছে ঝুঁকিতে। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পূর্ব আমিলাইষ গ্রামে।  প্রথম আলো
শঙ্খ নদে বিলীন হয়ে গেছে পাকা দুটি ভবন। পাশের বসতঘরগুলোও রয়েছে ঝুঁকিতে। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পূর্ব আমিলাইষ গ্রামে। প্রথম আলো

জুলাইয়ের শুরুতে বন্যার সময় বসতঘরের কিছু অংশ তলিয়ে গিয়েছিল কৃষক মোহাম্মদ শাহজাহানের। বন্যার পানি নামার পর শুরু হয় শঙ্খ নদের ভাঙন। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে বেড়ার বসতঘরটি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে।
শাহজাহানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নের উত্তর ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা গ্রামে। তিনি বলেন, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ঘর ভেঙেছে। ১০ বছর আগে আরেকবার ঘর ভেঙে যায়। চোখের সামনে ঘর চলে গেল কিছুই করার ছিল না।
সাতকানিয়ায় শঙ্খের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার চরতী, আমিলাইষ, নলুয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর ও বাজালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গত ১৫ দিনে ১২০টি বসতঘর নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে আছে দেড় হাজারের বেশি বসতঘর। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে শঙ্খপাড়ের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষা শুরু হলেই শঙ্খ নদের আশপাশের গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। প্রতিবছরই নদের ভাঙনে বসতঘর ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। অনেক জায়গায় গত বছর ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা না হলে কোনো অবস্থাতেই ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, চরতী ইউনিয়নের তুলাতুলি-ঘাটঘর এলাকায় একটি সড়কের আংশিক নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি আধাপাকা বসতঘর বিলীন হওয়ার পথে। আমিলাইষ ইউনিয়নের পূর্ব আমিলাইষ গ্রামেও ভাঙছে শঙ্খের পাড়। এ গ্রামে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। নদে আংশিক বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ২০টি বসতঘর। আরও ২৫-২৭টি বসতঘর বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শঙ্খ নদের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় বাজালিয়া এলাকায় শঙ্খ নদের বাঁধ ভেঙে একটি তিনতলা ভবন পুরোপুরি হেলে পড়েছে। গত ১৫ দিনে কাঁচা, আধাপাকা ও পাকাসহ ১২০টি বাড়ি শঙ্খ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আংশিক বিলীন হয়েছে চার শতাধিক বসতঘর। আর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ১ হাজার ৬০০টি বাড়ি। মৌলভির দোকান-চরতী সড়কের পূর্ব আমিলাইষ অংশও হুমকিতে রয়েছে।
আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সারওয়ার উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর আমার প্রতিবেশী কয়েকটি পরিবার তাঁদের বসতঘর হারিয়েছেন। আর দুটি বাড়ি নদের মধ্যে ভেঙে পড়লেই আমাদের পাকা বাড়িটিও বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বাজালিয়া ইউপির চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা এলেই নদের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন শুরু হয়। বাজালিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নদের বাঁধ ভেঙে একটি তিনতলা ভবনসহ ১০টি বাড়ি ভেঙে গেছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শঙ্খ নদে বসতঘর বিলীন ও ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি পানিসম্পদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শঙ্খ ও ডলু নদের ভাঙন প্রতিরোধে বর্তমানে ১৩০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজের গতি একটু কম। তবে আগামী বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধের এই কাজ শেষ হলে শঙ্খ নদের পাড়ের বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তা আর থাকবে না।