মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা পূরণে বাংলাদেশ সচেষ্ট

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণে সচেষ্ট আছে এবং সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচেনায় জেনেভায় অনুষ্ঠিত সভায় গতকাল বাংলাদেশের পক্ষে সমাপনী বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেছেন। দুদিনের সভার শেষ দিনে আইনমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জারি করা ইনডেমনিটি আইন দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্ম দেয়। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পূর্ব পর্যন্ত’ বাংলাদেশে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বজায় ছিল।

’৯৬–তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর নির্যাতনবিরোধী সনদে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই সনদ এবং মানবাধিকারের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা পূরণের উদ্যোগ ‘২০০১ সালের বিতর্কিত নির্বাচন’–এর পর স্থবির হয়ে পড়ে। পঁচাত্তরে সংঘটিত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্ভব হয়েছে ২১ বছর পর। কিন্তু সেই সময়ে হত্যাকারীদের দায়মুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক বলে আনিসুল হক মন্তব্য করেন।

নির্যাতনবিরোধী কমিটি ক্যাটে সরকারের প্রতিবেদন পেশ করতে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও সরকার গঠন করার পরই মানবাধিকারের বিষয়টিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গতি পায়। মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন সনদ–সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে সরকার এ পর্যন্ত সাতটি প্রতিবেদন দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রথম দিনে উত্থাপিত শতাধিক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার শুরুতে আইনমন্ত্রী প্রধানত বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারি আইন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর বিভিন্ন আইন ও বিধিমালায় নির্যাতন প্রতিরোধে এবং প্রতিকারে যেসব বিধান রয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংবিধানের ৩৫ ধারার উপধারাগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতন প্রতিকারে মৌলিক অধিকারের এসব বিধান জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদ ক্যাটের বিধানগুলোর পরিপন্থী নয়, বরং তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। দেশের ফৌজদারি আইন এবং অন্যান্য আইনকেও তিনি সংগতিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।

অঘোষিত আটক–সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আইনে গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে কারণ জানানোর বাধ্যবাধকতা আছে। তবে ১৯৭৪ সালে তৈরি বিশেষ ক্ষমতা আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইনে সন্দেহভাজনকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান রয়েছে, যাতে তাঁকে ৯০ দিন পর্যন্ত আটক রাখা যায়। চোরাকারবারি ও মজুতদারির মতো অপরাধ মোকাবিলায় সে সময় এই আইন করা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরে সামরিক শাসনামলে এর সবচেয়ে বেশি অপপ্রয়োগ হয়েছে। বর্তমানে এই আইনের প্রয়োগ শূন্যের ঘরে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। বিশেষ বিশেষ অপরাধ মোকাবিলায় এর প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জামিনের অধিকারবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জামিন-অযোগ্য কিছু অপরাধ ছাড়া সব মামলাতেই জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। তবে নারী ও ১৬ বছরের কম বয়সী অভিযুক্তদের অজামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়ার বিধান আছে। সরকার এখন আদালতের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে না বলেও তিনি দাবি করেন।

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ থেকে র‌্যাব এবং পুলিশ যে অব্যাহতি দাবি করেছে, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়ায় কমিটিকে মন্ত্রী বলেন, সরকার এখনো এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং সে রকম অব্যাহতি দেওয়া হবে না। ক্যাটের ভাইস চেয়ারম্যান এফ গায়ের প্রশ্ন করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে দেশের প্রচলিত কোনো আইন থেকে এ ধরনের অব্যাহতি দাবি করতে পারে?

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া বা রিমান্ড–সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আইনের বিধানগুলো ব্যাখ্যা করে বলেন, স্বীকারোক্তি যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বেচ্ছামূলক না হয়, তাহলে তা আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। রিমান্ডে নির্যাতন হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর দায়িত্ব রয়েছে এবং অভিযোগ পেলে বা আঘাতের চিহ্ন দেখলে চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। রিমান্ড বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করা নিম্ন আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করা হবে।

নির্যাতনের অভিযোগ প্রশ্নে মন্ত্রী শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) কথা ঘোষণা করলেও প্রশ্ন ওঠে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মামলাগুলো যতটা গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, নির্যাতনের অভিযোগ–সম্পর্কিত মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটি কেন দেখা যায় না। সম্পূরক প্রশ্নের পালায় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মিস গায়ের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর বিষয়ে মন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এত বেশি সংখ্যায় এসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং সেগুলোর বিশদ বিবরণ সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। তিনি কক্সবাজারে একরামুলকে হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে হত্যার আওয়াজ মোবাইল ফোনে তাঁর পরিবারের শোনার ঘটনা উল্লেখ করেন। সাতক্ষীরায় মোখলেসুর রহমানকে থানায় স্ত্রী ভাত খাইয়ে আসার পর হেফাজতে নেওয়ার কথা অস্বীকারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি জানতে চান, দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ের কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ভীতি প্রদর্শন ও পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ জবাবে বলেন, ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আরও পাঁচজন বিচারপতি ছিলেন এবং রায়টি ছিল সর্বসম্মত। অন্য পাঁচ বিচারপতি এখনো বহাল আছেন এবং বর্তমান প্রধান বিচারপতিও তাঁদের একজন। সুতরাং, বিচারপতি সিনহার দাবি ভিত্তিহীন। তিনি বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিবরণ দিয়ে বলেন, হাইকোর্টে থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার তাঁকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ করেছিল। তিনি নিজস্ব স্বার্থে অনেক মামলায় অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার চেয়েছিল তিনি তাঁর মেয়াদ পূরণ করুন। কিন্তু তাঁর দুর্নীতির নথিপত্র দেখে অন্য বিচারপতিরা তাঁর কাছ থেকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে বিচারকাজে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণেই বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করেন।

>জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচেনা
জেনেভায় অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের পক্ষে সমাপনী বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী সংবিধান, ফৌজদারি আইন ও বিভিন্ন বিধান বিস্তারিত তুলে ধরেন

মামলার বোঝার কারণে অনেক সময় বিচার দীর্ঘায়িত হয় জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এ কারণে বিচার বিভাগের অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। জার্মান সহায়তায় বিচার বিভাগের একটি সমীক্ষা পরিচালনার কথাও জানান তিনি। সরকার প্রথমবারের মতো বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাপান, চীন ও ভারতেও তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে একাধিক সদস্যের পুনরায় প্রশ্ন করার মুখে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দেশের সংবিধানে নির্ধারিত বাধ্যবাধকতা এবং সরকার তা নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে উচ্চ আদালত জনস্বার্থবিষয়ক বিভিন্ন মামলায় নির্দেশনা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সেসব নির্দেশনা প্রতিপালন করছে। এর আগে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্বের জন্য সাবেক সামরিক শাসকদের দায়ী করেন।

‘সরল বিশ্বাসে’ গৃহীত পদক্ষেপের প্রশ্নে ছাড় দেওয়াকে দায়মুক্তির প্রতিশব্দ অভিহিত করে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর (এপিবিএন অ্যাক্ট) আইনের এই বিধানে সরল বিশ্বাস দাবি করলেই আপনাআপনি তার সুবিধা পাওয়া যায় না। সেটি প্রমাণের বাধ্যবাধকতা আছে। তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ড রহিতের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। আর এলজিবিটিদের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের ৭৭টি দেশের মতো বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনেও এটি অপরাধ। তবে দেশে কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য করা হয় না। এ পর্যায়ে আইনমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন হামলার বিষয়ে সরকার অপরাধীদের বিচার করছে জানিয়ে বলেন, বিএনপি সংখ্যালঘুদের আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বিবেচনা করে বলে ২০০১ সালে তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয় সাহার অভিযোগের কারণে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কোনো ধরনের হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অনেকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের চেষ্টা করলেও আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। প্রিয় সাহার গ্রামের সম্পত্তিতে হামলা ও দখলের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত এবং থানা হাজত ও কারাগারগুলো পরিদর্শনের অধিকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইনে সেই ম্যান্ডেট তাঁদের দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটির সভাপতি আবারও জানতে চান, নির্যাতনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য এসব স্থান নিয়মিত ভিত্তিতে কমিশন পরিদর্শন করে কি না এবং সরকার তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয় কি না। জবাবে মন্ত্রী জানান, কমিশনের চিঠির জবাব না দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় এবং কয়েক বছর আগে একটি কারাগারে কমিশনের চেয়ারম্যানকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে হয়ে থাকতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে কমিটির সদস্যরা বারবার বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও সেগুলোর জবাবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার বিচারের কথাই তুলে ধরা হয়। আনিসুল হক একপর্যায়ে বলেন, অভিযুক্তদের একজন সাবেক এক মন্ত্রীর জামাতা এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রমাণ করে, সরকার এসব বিষয়ে কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, স্বাধীন বেসামরিক একটি তদন্ত অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না। সরকারের তরফে এ বিষয়ে আর কিছু বলা হয়নি।

সুইডিশ রেডিওতে র‌্যাবের নির্যাতনপদ্ধতির যে বিবরণ একজন র‌্যাব কর্মকর্তার বরাতে প্রচারিত হয়েছে, সে ধরনের নির্যাতন পদ্ধতির অস্তিত্ব তদন্ত করার প্রশ্নে মন্ত্রী সুইডিশ রেডিওর ভাষ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কথিত ব্যক্তি র‌্যাবের সদস্য বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। তিনি সুইডিশ রেডিওকে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তার নাম, র‌্যাংকসহ সব তথ্য সরকারের কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেগুলো পেলে সরকার তা যাচাই করে দেখবে।

বাংলাদেশের পক্ষে কমিটির বিভিন্ন জিজ্ঞাসার এসব আনুষ্ঠানিক জবাবের পর কমিটির সদস্যরা আবারও কিছু সম্পূরক প্রশ্নে তাঁদের উত্তর না পাওয়া প্রশ্নগুলোই স্মরণ করিয়ে দেন। জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশে গুমের কোনো প্রচলন নেই দাবি করে বলেন, অনেকেই নানা কারণে অপহৃত হন, আত্মগোপন করেন এবং পরে ফিরে আসেন। আবার অনেকেই রাজনৈতিক কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এসব আত্মগোপন বা অপহরণকে গুম বলে প্রচার করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের ভারতে আবির্ভূত হওয়া এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরীর কথা বলেন। জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কমিটি হুম্মাম চৌধুরী ছাড়াও অন্য দুজন আমান আজমী এবং আহমেদ বিন কাসিমের বিষয়ে তথ্য চাইলেও এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে গতকাল আবারও প্রশ্ন ওঠায় মন্ত্রী বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে সংবাদমাধ্যমেও সে কথাই বলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলের নিখোঁজ নেতা মাইকেল চাকমার সর্বশেষ অবস্থাসম্পর্কিত প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট বিষয়টিতে শুনানি করেছেন এবং আদালত যা নির্দেশ দেবেন, সরকার তা প্রতিপালন করবে। দুজন মারমা বোনের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়, অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে এবং তাঁদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা নারীদের পাচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগের জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে এসব পাচার রোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরা হয়। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ড-বিজিবি-পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হওয়া নারী-শিশুর পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

২০১৮–র নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ভয়ভীতি দেখানো, কেন্দ্র দখল, বিরোধীদের গ্রেপ্তার এবং সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাগুলো উল্লেখ করে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য কমিটি যে অনুরোধ জানিয়েছিল, সে প্রসঙ্গটি অবশ্য গতকাল আলোচিত হয়নি। যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো স্বাধীনভাবে তদন্তের কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কমিটি তা–ও জানতে চেয়েছিল।

ক্যাটের পর্যালোচনায় যেসব বেসরকারি নাগরিক গোষ্ঠী বা এনজিও অংশগ্রহণ করেছে ও তথ্য দিয়েছে এবং যাঁদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেসব ভুক্তভোগী সরকারের প্রতিহিংসা, হুমকি বা হয়রানির শিকার হবেন না এমন অঙ্গীকার দাবির মুখে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার কারও প্রতি কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেবে না।

ক্যাট সভাপতি হ্যান্স সায়মন মডভিগ কমিটির বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সরকার আরও কিছু জানাতে চাইলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার (শুক্রবারের) মধ্যে কমিটিকে তা লিখিতভাবে জানাতে পারে। এরপর কমিটি আগামী সপ্তাহে তাদের পর্যবেক্ষণ চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করবে।

মডভিগ জানান, কমিটি অগ্রাধিকার হিসেবে তিনটি সুপারিশ করবে, যা আগামী এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হবে। বাকি সুপারিশগুলো আগামী চার বছরে বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে তিনি জানান, ওই সময়ের পর পরবর্তী পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে।