গাইবান্ধায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা

.
.

এবারের বন্যায় গাইবান্ধায় ২ হাজার ৪৭১ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা ৫৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন। এসব বীজতলার চারা দিয়ে পাঁচ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এসব বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে আমন ধানের চাষ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার গাইবান্ধায় গত ১০ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিন পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী ছিল। এ কারণে পানিতে ডুবে থেকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ও আমন ধান ও বীজতলার। এখানকার সাতটি উপজেলায় ৩১ হেক্টর জমির রোপা আমন, ২ হাজার ৪৭১ দশমিক ৫০ হেক্টরের আমনের বীজতলা, ২ হাজার ৩৮৮ দশমিক ৪০ হেক্টরের আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৫৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮টি, সুন্দরগঞ্জে ১২টি, ফুলছড়িতে ১০টি, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে ৫টি করে, সাদুল্যাপুরে ৪টি ও সাঘাটায় ১২টি রয়েছে। এসব বীজতলার চারা দিয়ে পাঁচ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা সম্ভব হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। আরও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবাই চারার সংকটে পড়বেন। তাই পানি নেমে যাবার পরপরই যাতে রোপণ করা যায়, সে জন্য দুটি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছি। কলাগাছের ভেলায় কাদামাটি দিয়ে এই বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।’
একই গ্রামের মান্নান মিয়া বলেন, আবার পানি বাড়লেও ভাসমান বীজতলার ক্ষতি হবে না। পানি বাড়বে, বীজতলাও ভাসবে। পানি কমার পর চারা লাগানো যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় কৃষিক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই উপজেলায় ৩২টি ভাসমান বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ভাসমান আরও বীজতলা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ১৫ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট আমন ধান রোপণের উপযুক্ত সময়। বিশেষত ব্রি-৫১ জাতের ধান বন্যা মোকাবিলায় অত্যন্ত উপযোগী। আবার বন্যা এলেও যাতে আমন চাষ বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য এই জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। ভাসমান বীজতলার চারা উৎপাদন হতে সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ দিন। ধান উৎপাদন হতে সময় লাগবে ১১০ দিন। শুধু তা–ই নয়, এই ধান প্রায় দুই সপ্তাহ পানির নিচে ডুবে থাকলেও গাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
ফুলছড়ি উপজেলার সমিতির বাজার গ্রামের সাখাওয়াত মিয়া বলেন, ‘এ্যাবারকা দুই বিগা জমিত আমোন ধান নাগাচিনো। কিনতো তা বানের পানিত নষটো হচে। একনো জমিত পানি আচে। তাই সোরকারের আশায় বসি থাকি নাই। কলার গাছ দিয়া পানির উপুর বিজতোলা বানাচি। চারা বড়ো হলে জমিত নাগামো।’
একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমন ধান রোপণ করা যায়। কিন্তু চারা পাব কোথায়। জমিতে এখনো হাঁটুপানি আটকে আছে। বীজতলাও তৈরি করতে পারছি না। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে দুটি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছি। এই চারা দিয়ে যে পরিমাণ জমি হয়, তাতেই আমন রোপণ করব।’
সদর উপজেলার গিদারি গ্রামের সাদা মিয়া বলেন, ‘বন্যায় এক বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। এখন জমি থেকে পানি কমে গেছে। কিন্তু নতুন করে ধান রোপণ করব, চারা পাব কোথায়। তাই কলার গাছ দিয়ে পানির ওপর ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছি।’