নদীর পানি বেড়ে ভাঙনের ঝুঁকি

নদীভাঙনের কবলে পড়েছে পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রাম। সাম্প্রতিক ছবি।  প্রথম আলো
নদীভাঙনের কবলে পড়েছে পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রাম। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

বরিশালের বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁর ভাঙন তীব্র হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া, মোল্লারহাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
এর আগে গত ১৬ জুলাই দুপুরে হঠাৎ করে সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনায় কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের মোল্লারহাট এলাকার বেশ কিছু অংশজুড়ে দেবে যায়। ওই দিন বিকেলের মধ্যে ১০টি বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়। ভাঙনের তীব্রতা বেশি থাকায় বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে ওই গ্রামের বড় একটি অংশ। হুমকিতে পড়েছে এলাকার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া তাবলিকুল ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, একটি মসজিদ, স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, আমীর হোসেন ফকির ও সেকান্দার মুনশির বসতবাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনে বিলীন হয় স্থানীয় সৈয়দ মোশারফ-রশিদা একাডেমি, আবুল কালাম কলেজ সংযোগ সড়কসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বাড়ে। এবার বর্ষা মৌসুমেও ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙন–আতঙ্কে নদের তীরের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জাকির হোসেন মাঝি বলেন, গত ১৬ জুলাই দুপুরে হঠাৎ তাঁদের বাড়িঘরসহ বিশাল এলাকা ফাটল ধরে দেবে যেতে থাকে। বিকেলের মধ্যে এসব এলাকা ও বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। দিনের বেলা হওয়ায় কোনোরকমে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গেছেন। সর্বস্ব হারিয়ে তাঁরা এখন নিঃস্ব।
ভাঙনে হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, গত বছর মোল্লারহাট বাজারটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আড়িয়াল খাঁ নদ, সুগন্ধা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরে আলম ব্যাপারী বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছি। দীর্ঘদিন ধরেই বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা এবং সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ নদে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তবে হঠাৎ করেই দক্ষিণ ভূতেরদিয়া এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।’
১৮ জুলাই ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ও বাবুগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান খান। তখন জেলা প্রশাসক ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে খাবার সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় তিনি ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেন।
পাউবো বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ গতকাল বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, অন্য সব নদীভাঙনের যে চরিত্র, বাবুগঞ্জের কেদারপুরের ভাঙনের চরিত্রটা তার থেকে ভিন্ন। কারণ, ওখানে একটি বড় এলাকা নিয়ে প্রথমে দেবে যায়। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে সেই দেবে যাওয়া অংশ বিলীন হয়। তাই এখানে জরুরি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অল্প অর্থ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এই এলাকার ভাঙন ঠেকাতে অন্তত ৫ কোটি টাকা দরকার।
আবু সাঈদ আরও বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমরা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আর স্থায়ীভাবে ওই এলাকার ভাঙনরোধের জন্য একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ওই ভাঙনের কারণ এবং আরও যেসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে, সেটা নিরূপণ করবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাব।’