বিদেশ সফরের কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ধমক

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঠিক কী কারণে বিদেশ গিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করতে গেলে এক সাংবাদিককে ধমকের সুরে থামিয়ে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন প্রকট হচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে—এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা। সমালোচনার মুখে সফর সংক্ষিপ্ত করে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রী দেশে ফেরার পর গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড ও ব্যানার দেখা যায়। ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আহ্বান’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডেঙ্গু চিকিৎসায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ’ শিরোনামে অন্তত ২৮টি বিলবোর্ড দেখা গেছে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথেও একই বিলবোর্ড চোখে পড়ে।

বিলবোর্ডে বলা হয়েছে, দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তে ফি নির্ধারণ, বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে চিকিৎসক প্রস্তুত করা ও সব হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সপরিবারে মালয়েশিয়া যান। টিকিট অনুযায়ী ৪ আগস্ট তাঁর ফেরার কথা ছিল। সমালোচনার মুখে সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার রাতে ঢাকায় ফেরেন তিনি। কথা ছিল ঢাকায় ফিরে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় সংবাদ সম্মেলন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। দুটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অংশ নিলেও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।

>

গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সপরিবারে মালয়েশিয়া যান
টিকিট অনুযায়ী ৪ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফেরার কথা ছিল
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা হয়
সমালোচনার মুখে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন মন্ত্রী

বুধবার রাতে দেশে ফেরার পর গতকাল সকালে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু কর্নার’ উদ্বোধন করতে যান জাহিদ মালেক। উদ্বোধনের পর হাসপাতাল থেকে বের হলে সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তবে তিনি সংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই চলে যান। পরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত ডেঙ্গুবিষয়ক এক সেমিনারে অংশ নেন।

দুপুর সাড়ে ১২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমন্বয় সভায় অংশ নেন জাহিদ মালেক। প্রথমে ঢুকতে দেওয়া না হলেও একপর্যায়ে অনেকটা চাপের মুখে সাংবাদিকদের বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক সাংবাদিক মন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে অনেকটা ধমকের সুরে মন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে গতকাল বিকেলে বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, মন্ত্রী সরকারি কোনো সফরে মালয়েশিয়া যাননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ওয়াহেদুর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রী চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চোখ পরীক্ষা করিয়েছিলেন। এর ফলোআপ করতে মালয়েশিয়া যান। মন্ত্রণালয়ের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তিনি শুনেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে মালয়েশিয়া গেছেন।

সব সুন্দরভাবে ম্যানেজ করা হচ্ছে
গতকাল সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালে এক সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক ও নার্সদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে তিনি এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন, কেউ চিকিৎসা পায়নি বা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছে, এমন ঘটনা নেই। সাংবাদিকদের দেখতে হবে চিকিৎসা হচ্ছে কি না, রোগী ফেরত যাচ্ছে কি না, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। সুন্দরভাবে সারা বাংলাদেশে ম্যানেজ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।