'কথায় কথায় প্রমাণ করতে হচ্ছে, আমরা বড় মুসলমান'

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের সংবাদ সম্মেলন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ছবি: প্রথম আলো
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের সংবাদ সম্মেলন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধে সরকার, পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমলেও আমাদের প্রমাণ করতে হয়নি, আমরা মুসলমান। এখন কথায় কথায় প্রমাণ করতে হচ্ছে, আমরা বড় মুসলমান। এই ঘটনা দুঃখজনক।’

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এতে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বিভিন্ন সময়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা বলছেন, যারা শক্তিশালী তাঁদের সঙ্গে থাকতে হবে। তাহলে তো আওয়ামী লীগের নামই বদলে রাখতে হয়। এসব অবিবেচনামূলক কথা রাজনীতিবিদদের বলা উচিত নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে (ফেসবুক) জাতিগত, বর্ণগত ঘৃণা ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ফেসবুকে কেবল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, তাঁকে নিয়েও বিদ্বেষমূলক বার্তা ছাড়ানো হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেও প্রতিকার পাননি।

সম্মেলনের শুরুতে সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর তিনটি ঘটনা তুলে ধরেন। গত ২৪ জুলাই রাজধানীর একটি স্কুলে এক ছাত্রী ইউনিফর্ম না পরে বোরকা পরে আসে। পরে ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ বি এম মিজানুর রহমান ছাত্রীকে স্কুলে ইউনিফর্ম পরে আসতে বলেন। এ নিয়ে এ ছাত্রীর পরিবার প্রধান শিক্ষক রমেশ কান্তি ঘোষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও তাঁর কক্ষে ভাঙচুর চালান। এর জের ধরে ছাত্রীর ভাই রাকিবুল হাসান ফেসবুকে পোস্ট লেখেন, যা থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে থানায় দুটি অভিযোগ জমা হয়েছে। বিষয়টা তদন্তাধীন।

আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের রসরাজ দাস ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মামলায় জেল খেটেছেন। তিন বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো থানা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। যদিও বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা আছে। নবীনগরের সঞ্জু বর্মনও ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীর ভুক্তভোগী।

সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রশাসনের একটি বড় অংশ সরকারের পক্ষে নেই অথচ সরকার তাঁদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় দ্রুত এই আইনটি পাস করতে হবে। পাশাপাশি এসব মামলা গোয়েন্দা তদন্ত করতে হবে ও ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার দেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালে দেশে সোয়া দুই শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বেড়েছে।

স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে হেয় করার জন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কমিটির সহসভাপতি ও শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। এসব ঘটনা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আইন সহায়ক কমিটির সভাপতি খন্দকার আবদুল মান্নান, আইন সম্পাদক নাদিয়া চৌধুরীসহ প্রমুখ।