বড়-বন্যার ঝুঁকিমুক্ত দেশ

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। গৃহপালিত গবাদিপশু উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষ। গতকাল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার মানিককড় চরে।  ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। গৃহপালিত গবাদিপশু উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষ। গতকাল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার মানিককড় চরে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দেয়। প্রায় সপ্তাহ তিনেক পানিবন্দী হয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল। এই বন্যায় প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। উজানের পানি সরে গেলেও ফের বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটি খুবই স্বল্পস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেশে এ বছর আর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা নেই।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি বছর বন্যা শুরু হয় বর্ষাকাল আসার এক মাস পর, জুলাইয়ে। ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বেশির ভাগ এলাকা ডুবে যায়। স্থানভেদে প্রায় তিন সপ্তাহ স্থায়ী ছিল এই বন্যা। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় দুই দফায় নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বন্যায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে জামালপুর, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও টাঙ্গাইল জেলায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম,বগুড়া, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সুনামগঞ্জ জেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিসহ ফসল ও বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পর জুলাইয়ে শেষ দিকে বন্যার পানি কমতে থাকে। মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়লেও সেটি বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটায়নি।

তবে বন্যার সময় এখনো পার হয়ে যায়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদী অববাহিকা রয়েছে। এগুলো হলো মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা অববাহিকা। এই তিন অববাহিকার ৯৩ শতাংশ এলাকা দেশের বাইরে। বাকি ৭ ভাগ রয়েছে দেশের ভেতর। এসব অববাহিকা দিয়ে উজানের পানির ঢল বাংলাদেশের ভেতর আসে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বেশির ভাগ এলাকা পড়েছে ভারত, ভুটান, চীনে। মেঘনা অববাহিকা এলাকার বেশির ভাগ অঞ্চল ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে। আর গঙ্গা অববাহিকা চীন, নেপাল, ভারতের বিশাল অংশ বয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এসব অঞ্চলে বর্ষাকালে টানা বৃষ্টি হলে নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা হয়। মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিনটি অববাহিকার পানি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার পানি একসঙ্গে বেড়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়েছিল। এবারের বর্ষাকালে এখন পর্যন্ত তিনটি নদী অববাহিকার পানি একসঙ্গে বিপৎসীমার ওপরে ওঠেনি। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানি বেশ বাড়লেও গঙ্গা অববাহিকার পানি সেই তুলনায় ধীরগতিতে বেড়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উজান থেকে পানি আসার সম্ভাবনা থাকে। তবে আপাতত কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সেই কারণে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত নদ-নদীগুলোর পানি বাড়বে না। কয়েক দিন আগে যে বন্যা দেখা দেয়, তার পানিও দ্রুত কমে যাচ্ছে।

মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। তবে এর তীব্রতা ও স্থায়িত্ব গত জুলাই মাসের বন্যার চেয়ে বেশ কম হবে। তাই দেশে এ বছর দীর্ঘস্থায়ী ও বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আজ শুক্রবার সকালের পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে, দেশে কোনো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৬টি স্টেশনে পানি কমছে, ১৩টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চারটি স্টেশনে অপরিবর্তিত রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগস্ট মাসের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, আগস্ট মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তরাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।