কিশোরগঞ্জ ও পার্বতীপুরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিশোরগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। পার্বতীপুরে গত সাত দিনে নারী-শিশুসহ সাতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত পুরো জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২১১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১০ জন গুরুতর আক্রান্ত রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছয়জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মো. হামজা নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সদর জেনারেল হাসপাতাল, বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং মোট ৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সব মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২১১ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী, হাসপাতাল সূত্র ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকার বাসিন্দা ও শহরের এসভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাত জাহান, শহরের উকিলপাড়া এলাকার আইনজীবী তাজুল ইসলাম, শহরের হারুয়া এলাকার গৃহিণী তাছলিমা আক্তারসহ মোট ছয়জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তাছলিমা আক্তার গত ২১ থেকে ২৫ জুলাই সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অন্যরা ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসক দেখিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে থেকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছেন। জানা যায়, তাঁদের কেউই দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা যাননি।

স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শহরের এসভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাত জাহান বলেন, তিনি গত এক বছর ধরে ঢাকা যাননি। এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। যেহেতু হাসপাতাল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ছাড়া স্থানীয়ভাবে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়নি, এ জন্য তিনি অনেকটা শঙ্কামুক্ত ছিলেন। কিন্তু দিন দিন জ্বরে খিঁচুনি ও প্রচণ্ড মাথা ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় ও সহকর্মীদের পীড়াপীড়িতে স্থানীয় একটি বেসরকারি ল্যাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বাসার পুরাতন কোর্ট এলাকায় সব সময় বর্ষা এলেই দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকে। তা ছাড়া এলাকার নালা–নর্দমাসহ রাস্তাগুলো ময়লা–আবর্জনায় ভর্তি। এ থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট মুহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, তিনি স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দুজন রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তবে তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।

২৫০ শয্যা সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সুলতানা রাজিয়া বলেন, তাঁর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল নতুন করে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এই হাসপাতালে মোট ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে দুটি শিশু, পাঁচজন নারী ও ৩৩ জন পুরুষ রোগী।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় হেলাল হোসেন (২১) নামের আরেক এক যুবক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে পার্বতীপুরে সাত দিনে নারী-শিশুসহ সাতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল পার্বতীপুর শহরের একটি প্যাথলজি সেন্টারতে রক্ত পরীক্ষা করলে হেলাল হোসেনের ডেঙ্গুর জীবাণু ধরা পড়ে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের জন্য সাতটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিরা হচ্ছে পার্বতীপুর উপজেলার হাবড়া ইউনিয়নের পশ্চিম শেরপুর (ভেমটিয়া) গ্রামের জীবন সরকারের ছেলে পলাশ সরকার (১৭), একই ইউনিয়নের রামরায়পুর চৌধুরীপাড়ার মৃত নরেন্দ্রনাথ পালের স্ত্রী সুরবালা (৬০), পার্বতীপুর শহরের গুলশান নগর মহল্লার পৌর কাউন্সিলর কৈলাশ প্রসাদের ছেলে রণিৎ প্রসাদ সোনার (১৭), পার্বতীপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুজ্জামানের ছেলে আরাফাত হোসেন (৯), উপজেলার বেলাইচণ্ডী ইউনিয়নের বেলাইচণ্ডী গ্রামের মো. আবদুস সামাদের ছেলে আসাদ আলী (৩৮), একই ইউনিয়নের খাজেরপাড়া গ্রামের হেলাল হোসেন (২১) ও সাহেবপাড়া মহল্লার মাসুমা (২০)।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পলাশ, আরাফাত, রণিৎ, আসাদ আলী ও হেলাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহেল মাফী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট (চিকিৎসা সহকারী) হারুন বলেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বহির বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের জন্য সাতটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।