জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত

ঢাকায় কলাবাগানের লেক সার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় কলাবাগানের লেক সার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

কাতারের দোহায় হতে যাচ্ছে ১৬তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড (আইজেএসও ২০১৯)। এ জন্য বাংলাদেশ দল নির্বাচন করতে গতকাল শুক্রবার দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহর ও একটি জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হলো আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক পঞ্চম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের (বিডিজেএসও ২০১৯) আঞ্চলিক পর্ব।

বিভাগগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও জেলা শহর নেত্রকোনা। এবারের বিডিজেএসওর আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের আটটি বিভাগে। গত ২৬ জুলাই হয়েছে বরিশাল ও সিলেটের আঞ্চলিক পর্ব। এর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের চারটি স্কুলে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে স্কুল অলিম্পিয়াড। এই আট আঞ্চলিক পর্ব ও চার স্কুল অলিম্পিয়াডে প্রায় ৭ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় চারটি ক্যাটাগরিতে। এগুলো হলো প্রাইমারি (তৃতীয় থেকে পঞ্চম), জুনিয়র (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি), সেকেন্ডারি (নবম ও দশম শ্রেণি) ও স্পেশাল (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি, ১ জানুয়ারি ২০০৪ সালের পর যাদের জন্ম)। ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের এই অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের তিনটি সমস্যার সমাধান করতে হয়।

গতকাল ঢাকার আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডটি আয়োজিত হয় কলাবাগানের লেক সার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এই অলিম্পিয়াডে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর ৭০টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা জালাল আহমেদ এবং লেক সার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন পঞ্চম জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক মুনির হাসান।

চট্টগ্রামে আরেকটি আঞ্চলিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এটি উদ্বোধন করেন সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীতি ত্রিপাঠি। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের জোনাল হেড মোহাম্মদ আজম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উৎসবে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান টোটন চন্দ্র মল্লিক। স্থানীয়ভাবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উৎসবটি আয়োজন করে চট্টগ্রামের সামাজিক সংগঠন অব্যয়।

খুলনায় জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
খুলনায় জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার আঞ্চলিক পর্ব উদ্বোধন করেন ফাতিমা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার শিখা গোমেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের খুলনা জোনাল অফিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেরদৌস হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের খুলনা জোনাল অফিসের এস এ ভিপি ও দ্বিতীয় কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান। এই পর্ব থেকে ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়ভাবে এই পর্ব আয়োজনে সহায়তা করে সত্যেন বসু বিজ্ঞান ক্লাব।

একই দিনে রাজশাহী অঞ্চলের অলিম্পিয়াডটি অনুষ্ঠিত হয় গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে। এই অলিম্পিয়াডে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩২টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৩২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অলিম্পিয়াডটি উদ্বোধন করেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক রাজশাহী ব্রাঞ্চের প্রিন্সিপাল অফিসার আবদুর রহমান। এই পর্বে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

রংপুর অঞ্চলের অলিম্পিয়াডটি অনুষ্ঠিত হয় রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় রংপুর ও আশপাশে জেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী। অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের অধ্যক্ষ কর্নেল শামীম ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক রংপুর ব্রাঞ্চের ম্যানেজার শাজেদুল ইসলাম।

নেত্রকোনার আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড উদ্বোধন করেন আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক নেত্রকোনা ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক শাহ মো. বাকি বিল্লাহ ও সহব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এই অলিম্পিয়াডে ময়মনসিংহ বিভাগের ছয়টি জেলার ৪০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। নেত্রকোনা আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড আয়োজনে স্থানীয়ভাবে সহায়তা করে নেত্রকোনার বিজ্ঞান ক্লাব ম্যাসন।

সব আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ফলাফল বিডিজেএসওর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আঞ্চলিক পর্ব ও স্কুল অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের তালিকা বিডিজেএসওর ওয়েবসাইটে (www.bdjso.org) পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া ৫ আগস্ট অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে একটি ই-অলিম্পিয়াড। ই-অলিম্পিয়াড থেকে ৪০ জনকে জাতীয় পর্বের জন্য বিজয়ী করা হবে। ই-অলিম্পিয়াডের রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে bdjso.org/eOlympiad ওয়েবসাইটে।

বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড এবার আয়োজিত হচ্ছে পঞ্চমবারের মতো। আটটি আঞ্চলিক পর্ব, ই-অলিম্পিয়াড ও স্কুল অলিম্পিয়াডের বিজয়ীরা অংশ নেবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় পর্বে। জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম বিডিজেএসও ক্যাম্প। বিডিজেএসও ক্যাম্পের সেরাদের নিয়ে আয়োজিত হবে এক্সটেনশন ক্যাম্প। সেখান থেকে বাছাই করা হবে কাতারের দোহায় ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৬তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দল।

বিডিজেএসও যৌথভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ)। আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষক আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সহযোগী হিসেবে আছে দৈনিক প্রথম আলো। ম্যাগাজিন পার্টনার কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা। টেলিভিশন পার্টনার নাগরিক টিভি, কমিউনিকেশন পার্টনার বিজ্ঞান বাক্সো ও নলেজ পার্টনার ম্যাসল্যাব।

অলিম্পিয়াডের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বিডিজেএসওর ওয়েবসাইট www.bdjso.org এবং ফেসবুক পেজ www.facebook.com/bdjso–এ। বিজ্ঞপ্তি