২৬ দিন পর নামল বন্যার পানি

২৬ দিন পর গতকাল শুক্রবার দেশের সব নদীর পানি অবশেষে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। পানি নেমে গেলেও এখনো দেশের ৬ হাজার ৮৬৭টি গ্রামে বন্যার ক্ষত রয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে এই বন্যায় ৭৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সবচেয়ে বিপদে আছে সাড়ে তিন লাখ হতদরিদ্র।

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে করা ‘২০১৯–এর মৌসুমি বন্যা: যৌথ চাহিদার সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মূলত বন্যার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পুনর্বাসন পরিকল্পনা তৈরি করতে এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের ভেতরে কাজ করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ওই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে। গত ৭ জুলাই কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রথম বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও, ব্যাপকভাবে বন্যা শুরু হয় ১২ জুলাই। সে ক্ষেত্রে ওই দিন থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময়কালে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বন্যায় ৭ জুলাই চট্টগ্রামের হালদা নদীতে প্রথম পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে তীরবর্তী এলাকায় বন্যা শুরু হয়। আর সর্বশেষ গত শুক্রবার পানি নেমে যায়। তবে সব এলাকায় পানি টানা ২৬ দিন ছিল না। বন্যার পানি সবচেয়ে বেশি ছিল সুনামগঞ্জে ১৭ দিন, মৌলভীবাজারে ১৫ দিন, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে ১৪ দিন করে। 

এবারের বন্যা সম্পর্কে বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, ২৮টি জেলায় বন্যার পানি উঠলেও ৮ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জসহ আটটি জেলার অর্ধেকের বেশি এলাকা বন্যায় ডুবে যায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামগ্রিকভাবে এই বন্যায় তিন লাখ মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হলেও শুধু কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় ঘরবাড়িছাড়া হয়েছে ৭০ হাজার মানুষ। এই বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১ হাজার ৬৫৪টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

>

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবেদন
১২ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় সাড়ে ৩ লাখ হতদরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত

এ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব শাহ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শেষে আমরা এখন পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছি। মূলত সরকারের নিজস্ব অর্থ ও সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে এই বন্যা মোকাবিলা করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে সরকার বন্যার্তদের সহায়তায় সাধারণ ত্রাণ হিসেবে ২৩ লাখ টন চাল ও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ কোটি টাকা, ৬০ হাজার বান্ডিল ঢেউটিনসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতির স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের বন্যা পরিস্থিতি খুব দ্রুততম সময়ে অবনতি হয়। আর বন্যার্ত এলাকায় স্যানিটেশন–ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মলমূত্র বন্যার পানির সঙ্গে মিশে পানিবাহিত নানা রোগের সৃষ্টি করে।

বন্যার ক্ষতি ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় যে সাড়ে তিন লাখ হতদরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। একই সঙ্গে আগস্টের শেষ দিকে যে আরেকটি বন্যা আসতে পারে, তার জন্য আগাম প্রস্তুতিও নিতে হবে। সেপ্টেম্বরের দিকে বন্যার কৃষি পুনর্বাসনের কাজ শুরু করতে হবে।