টেকনাফে 'পৃথক গোলাগুলিতে' নিহত ৪

ডাকাতি ও ইয়াবা ব্যবসার জের ধরে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে পৃথক গোলাগুলিতে তিন ডাকাত ও এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় দুজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে টেকনাফ উপজেলার নুরু উল্লাহঘোনা ও টেকনাফ সদরের দরগাহপাড়া নামক এলাকায় এ দুটি পৃথক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত চারজন হলেন রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমের সহযোগী কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৫), মোহাম্মদ জুনায়েদ (৩৩), টেকনাফের মোহাম্মদ মেহেদী হাসান (৩২) ও মাদারীপুরের কালকিনির ইমরান মোল্লা (২৭)।

পুলিশের দাবি, নিহত চারজন ডাকাত ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ সময় ডাকাত দলের কাছ থেকে সাতটি দেশীয় অস্ত্র, পাঁচটি লম্বা কিরিচ ও ২৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ইয়াবা ব্যবসার জের ধরে প্রভার বিস্তারের ঘটনায় দুটি এলজি, পাঁচটি গুলিসহ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির পশ্চিম এনায়েতপুরের সাইফুদ্দিন শাহিন (৩৮) ও টেকনাফের হাতিয়ারঘোনার মো. সিদ্দিককে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজোয়ান (৩৪), গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মানস বড়ুয়া (৩৭), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সনজিত দত্ত (৩২) ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান (২৫)।

ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানান, টেকনাফের নুরু উল্লাহঘোনা নামক পাহাড়ে একাধিক মামলার পলাতক আসামি ও রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি মো. জুনায়েদ, মো. আইয়ুব, মোস্তাক ডাকাতসহ ১০ থেকে ১৫ জন ডাকাত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন—এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে যায় পুলিশ।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজোয়ানসহ চারজন আহত হলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলিসহ তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দ্রুত টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাত দেড়টার দিকে টেকনাফের দরগারপাড়া এলাকার মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের টহল দল সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে সড়কের পাশে সন্দেহজনকভাবে দাঁড়ানো দেখে ওই স্থানে পৌঁছায়। এ সময় এক ব্যক্তিকে গুলি করে পালানোর সময় সাইফুদ্দিন শাহিন ও মো. সিদ্দিক নামের দুজনকে দুটি এলজি, পাঁচটি গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমরান মোল্লা নামের অপর এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেপ্তার করা দুজন জানান, স্থানীয় খলিল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ইয়াবা কিনে তা ইমরানকে খাওয়ানো হয়। ইয়াবা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জের ধরে ইমরানকে গুলি করা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দেন তাঁরা।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শঙ্কর চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, রাতে পৃথক দুটি ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যসহ আটজনকে হাসপাতালে আনা হলে তাঁদের মধ্যে চারজন মারা যান। নিহত ব্যক্তিদের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। গুরুতর জখম না হওয়ায় সকালে আহত চার পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, নিহত চারজনের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পৃথক ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

গত বছর ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির বন্দুকযুদ্ধ ও মাদকে প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় দুজন নারীসহ ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন রোহিঙ্গা।