রোগী সেজে হাসপাতালে থেকে...

রোগী সেজে নারী রোগীদের উত্ত্যক্ত করেন বখাটে সোহেল রানা (২৯)। বিভিন্ন সময়ে রোগীদের স্পর্শকাতর স্থানেও হাত দিতেন। লজ্জায় অনেক রোগী বিষয়টি গোপন রাখেন। তবে আজ শনিবার দুপুরে এক রোগীর শ্লীলতাহানি ঘটানোর সময় তাঁকে ধরে ফেলা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে। দণ্ড পাওয়া ওই বখাটের বাড়ি উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বখাটে সোহেল রানা শরীরে ব্যথার অজুহাতে গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসকেরা কোনো রোগ না পেয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। এ সময়ে তিনি প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের উত্ত্যক্ত করেন। নারী রোগীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। তবে রোগীরা অস্বস্তিতে বিষয়টি গোপন রাখেন এবং অনেকে তাঁকে এড়িয়ে চলেন।

আজ দুপুরে একজন নারী রোগী (২৮) ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর ওই রোগীর শরীরে হাত দেন। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা লোকজন বিষয়টি টের পান। এ সময় তিনি দৌড় দেন। লোকজনও তাঁকে ধাওয়া করেন। ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌরভ কুমার চন্দ্র বিষয়টি বুঝতে পেরে দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন।

এ সময় সোহেল রানা নিজেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী বলে পরিচয় দেন। তাঁকে ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে উপস্থিত জনতা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে এসে হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। এ সময় নারী রোগীরা তাঁর বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ দেন।

শ্লীলতাহানির শিকার ওই নারী রোগী ঘটনাটি আদালতকে জানান। পরে আদালতের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেন সোহেল রানা। এ সময় আদালতের বিচারক নির্বাহী হাকিম বাগমারার ইউএনও জাকিউল ইসলাম বখাটে সোহেল রানার বিরুদ্ধে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বিচারক জাকিউল ইসলাম বলেন, আদালতের কাছে বখাটে তাঁর অপরাধ শিকার করেছেন এবং ঘটনার শিকার রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাগমারা এসআই সৌরভ কুমার চন্দ্র চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, বখাটে সোহেল রানা কোনো রোগ না থাকা সত্ত্বেও শুধু নারীদের উত্ত্যক্ত করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। মাঝেমধ্যে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নারী রোগীদের উত্ত্যক্ত করেন এবং শ্লীলতাহানি ঘটান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারজন নারী রোগী ও তাঁদের অভিভাবকেরা প্রথম আলোর কাছে একই অভিযোগ দেন। তাঁরা বলেন, লজ্জায় বিষয়টি প্রকাশ করতে পারেননি।