ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরে গৃহবধূর মৃত্যু

মাদারীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এবার নাদিরা আক্তার নামের (৪০) এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে কালকিনি উপজেলা থেকে মাদারীপুর সদরে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। 

নাদিরা আক্তার কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর এলাকার আলমগীর মোড়লের স্ত্রী। এ নিয়ে মাদারীপুরে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

হাসপাতাল ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু নিয়ে গত ৩০ জুলাই কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন নাদিরা। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালে কোনো জায়গা না পেয়ে নাদিরাকে সন্ধ্যায় তাঁর স্বজনেরা আবারও কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেরত নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকেরা রাতে নাদিরাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে স্বজনেরা পরে জেলার সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক নাদিরাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নাদিরার স্বামী আলমগীর মোড়ল জানান, এক সপ্তাহ আগে তাঁর মেয়ে খাদিজা আক্তার ঢাকায় অবস্থানকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে মাদারীপুরে গ্রামের বাড়ি আনা হয়। পরে তাঁর স্ত্রী নাদিরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাঁকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আনার পথে নাদিরার মৃত্যু হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার রুবেল হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তার (২২) ও বুধবার রাতে ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মারা যান শিবচরের সলু ব্যাপারীর কান্দি এলাকার বাবু খানের ছেলে ফারুক খান (২২)।

মাদারীপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১০ দিনে জেলার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে অন্তত ৪০ জন রোগী। রোগীদের মধ্যে বড় অংশ এসেছে ঢাকা থেকে। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৮ জন। গতকাল রাত থেকে আজ শনিবার বেলা একটা পর্যন্ত নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও দুজন রোগী ভর্তি হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, মাদারীপুরে ২০ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪৮ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছে ৩৫ জন রোগী। জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে ১১ জন। এ ছাড়া কালকিনি, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন রোগী ভর্তি আছে।

আজ বেলা একটার দিকে মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা সরদার মোহাম্মদ খলিলুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া জেলায় এডিস মশার অস্তিত্ব কমবেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা এখানে গুরুতর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’