খানাখন্দে ভরা সড়ক, এক বছরেও শেষ হয়নি সংস্কারকাজ

খানাখন্দে ভরা সড়কে জমেছে বৃষ্টির পানি। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শত শত যানবাহনকে। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। ভবানীপুর, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা, ২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
খানাখন্দে ভরা সড়কে জমেছে বৃষ্টির পানি। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শত শত যানবাহনকে। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। ভবানীপুর, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা, ২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

গত বছরের আগস্ট মাসে শুরু হয়েছিল সড়কটির সংস্কারকাজ। প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেছে আরও দুই মাস আগে। কিন্তু তবু শেষ হয়নি নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটির সংস্কারকাজ। সড়কে তৈরি হওয়া অসংখ্য গর্তে বৃষ্টির পানি জমে রূপ নিয়েছে ছোটখাটো পুকুরে। খানাখন্দে ভরা সড়কে তাই ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও সংস্কারের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই সড়ক এমন বেহাল। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মাস দেড়েক ধরে এক অংশে সংস্কারকাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

এলজিইডির নেত্রকোনা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটি সংস্কারের জন্য ২০১৮ সালের মে মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকায় সংস্কারকাজের দায়িত্ব পায় ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৫ আগস্ট সংস্কারকাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ৬ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও সড়কের বেশির ভাগ অংশই এখনো মেরামত করা হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দেড় মাস ধরে কলমাকান্দা অংশ সংস্কারকাজ বন্ধ আছে। দীর্ঘদিন এভাবে থাকায় সড়কে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে সড়কটিতে।

কলমাকান্দার ভবানীপুর গ্রামের সিএনজিচালক রফিক মিয়া বলেন, আগে সিএনজিতে করে দুর্গাপুর থেকে কলমাকান্দা যেতে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লাগত। কিন্তু এখন দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। একাধিক জায়গায় গর্তে আটকা পড়তে হয়। যানজটও লেগেই থাকে। কলমাকান্দা এলাকার ব্যবসায়ী শাহেদ আলী বলেন, সংস্কারকাজের দীর্ঘসূত্রতার জন্য দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমন হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে এ রকম হতো না।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, কলমাকান্দার সঙ্গে নেত্রকোনাসহ সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এক ঘণ্টার পথ তিন থেকে চার ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে।

সড়ক সংস্কারের ধীরগতির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. জামালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলী মো. হাসান বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে ওই কাজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। যতটুকু জানি, বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই মাস ধরে কাজটি বন্ধ আছে। ঈদের পর থেকে টানা কাজ করে তা শেষ করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

সংস্কারকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তবে এলজিইডির কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করছে। এ নিয়ে আমরাও খুব বিপদে আছি। দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যন্ত ছয়বার নোটিশ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন সাড়া না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’