২৯ লাখ টাকা নিয়ে চাকরির বদলে দিলেন উল্টো হুমকি

আট ব্যক্তিকে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিবিএ নেতা মো. ইয়াকুব আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। চাকরি তো দিতে পারেননি, টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি দেন সিবিএ নেতারা। এ ঘটনায় ইয়াকুবসহ তিনজনের নামে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় জিডি করেছেন যমুনা অয়েল কোম্পানির আরেক কর্মী মো. তোতা মিয়া। তোতা মিয়া শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি ডিপোতে কর্মরত আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিডিতে তোতা মিয়া ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনেন যমুনা অয়েল কোম্পানির লেবার ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী, যমুনা অয়েলের ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের বিরুদ্ধে। গত ১৯ জুলাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় করা জিডি নম্বর ৮৬৯। ইয়াকুব আলী যমুনা অয়েলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কর্মরত আছেন। মো. আবদুল নুরও চট্টগ্রামে যমুনা অয়েলের ঠিকাদার–শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। আর মো. ফয়সালের বাড়ি ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাটে। তিনি যমুনা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি না করলেও এখানকার সিবিএ নেতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। 

তোতা মিয়া জিডিতে উল্লেখ করেন, বিবাদীরা (অভিযুক্ত তিনজন) যমুনা অয়েল কোম্পানিতে আটজনকে চাকরি দেবেন বলে তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে শাহজাদপুর করতোয়া সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও কাউকে চাকরি দিতে পারেননি।

তোতা মিয়ার আরও অভিযোগ, ‘আমি বিবাদীদের কাছে পাওনা টাকা চাইলে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়া হয়। বিবাদীরা আমাকে মারধরসহ যেকোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারেন।’

শাহজাদপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান তাঁর থানায় এ–সংক্রান্ত জিডি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হুমকি-ধমকি সংক্রান্ত তোতা মিয়ার অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে, জিডির সঙ্গে শাহজাদপুর করতোয়া সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা পাঠানোর রসিদও সংযুক্ত করে দেন তোতা মিয়া। প্রায় দুই বছর ধরে ধাপে ধাপে এই টাকা পাঠান তিনি। কখনো মো. ইয়াকুব আলী, কখনো মো. আবদুল নুর চট্টগ্রামে নগদ টাকা গ্রহণ করেছেন বলে রসিদ পর্যালোচনায় দেখা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে মো. তোতা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, যমুনা অয়েল কোম্পানির সিবিএ নেতা মো. ইয়াকুব আলীসহ তিনজন ব্যক্তি আটজনকে চাকরি দেবেন বলে ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন। একজনকেও চাকরি দিতে পারেননি তাঁরা। টাকা ফেরত চাইলে তাঁরা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ইদানীং গড়িমসি করছেন।

টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়া তো আইনত অপরাধ। তাহলে টাকা কেন দিলেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তোতা মিয়া বলেন, ‘যাদেরকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তারাই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছি। টাকাগুলো আমার মাধ্যমেই গেছে। এটা যে অপরাধ, তা আমার জানা ছিল না।’

তোতা মিয়ার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সিবিএ নেতা ইয়াকুব আলী। তাঁর ভাষ্য, চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অবান্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. ইয়াকুব আলীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। বর্তমানে তিনি বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, দেড় বা দুই বছর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন ইয়াকুব। 

দুই দফা তোতা মিয়ার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন যমুনা অয়েলের ঠিকাদার–শ্রমিক মো. আবদুল নুর। তিনি বলেন, ‘তোতা মিয়া আমার জন্য টাকা পাঠাননি। তবে আমার ঠিকানায় আসা টাকা একজন ব্যক্তিকে দিতে বলেছেন। আমি ওই ব্যক্তির হাতে টাকা তুলে দিই। এ জন্য আমাকে চার শ–পাঁচ শ টাকা করে দেওয়া হতো।’