সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ, গ্রেপ্তার ৩

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমির হোসেন ওরফে ফারাবি (১৯) দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বুকে ইটের আঘাত পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজারবাগান শিবতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা কাত্থডা গ্রামের ইমদাদুল হক মিলন ও একই উপজেলার গাংনিয়া গ্রামের মোস্তাকিম বিল্লাহ।

সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুলিবিদ্ধ আজমিরের বাবা শাহাদৎ হোসেন বলেন, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা রাজারবাগান শিবতলা এলাকার একটি মেসে শনিবার রাতে নাশকতার লক্ষ্যে গোপন সভা করছেন, এমন খবর পান আজমির। পরে তা যাচাই করার জন্য জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ১৬ জন ওই এলাকায় যান। এ সময় তাঁদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সংশ্লিষ্টরা প্রথমে ইটপাটকেল ও পরে গুলি ছোড়েন। এতে আজমির বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। একই সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের বুকে ইট লাগে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

রাজারবাগান শিবতলা এলাকায় রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ওই দোতলা মেস বাড়িটির দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়িটির মালিক খলিলুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাঙ্গলদাড়িয়ায়। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা। বাড়ির নিচের তলায় থাকেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি এলাকার কামরুল ইসলাম। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। দোতলাটি মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

কামরুল ইসলাম বলেন, ওই বাড়ির নিচতলায় তিনি ছয় বছর ধরে থাকেন। নিচতলার একটি ঘরে প্রাইভেট পড়ান। বছরখানেক হলো অবিবাহিতদের (ব্যাচেলর) দোতলাটি ভাড়া দেওয়া হয়। ৮ থেকে ১০ জন ওই দোতলার দুটি ঘরে থাকতেন বলে শুনেছেন। শনিবার রাতে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান কামরুল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শোনেন তাঁর বাড়িতে গুলি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা শুনে তিনি বাড়ি ফিরলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে বাসায় যেতে নিষেধ করেন। পরে তিনি রাতে এক ছাত্রের বাড়িতে ছিলেন।

স্থানীয় কয়েকজন নারী জানান, শনিবার রাত ১০টার পর একটি প্রাইভেট কার ও লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকজন ওই বাড়িতে আসেন। এসেই তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এ সময় তিনটি গুলির শব্দ হয়। স্থানীয়দের দাবি, রাতে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে অস্ত্র ছিল।

বাড়ির মালিক খলিলুর রহমান বলেন, দোতলার দুটি ঘরের একটিতে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা এলাকার শিমুল হোসেন ও অপরটি একই উপজেলার বুধহাটা এলাকার মেহেদি হাসানকে ভাড়া দিয়েছিলেন। ৭ থেকে ৮ জন সেখানে থাকতেন।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অন্য একজন বলেন, ‘ভাইয়া খুব অসুস্থ। তাঁকে ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন।’

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন, নাশকতার পরিকল্পনায় জামায়াত-শিবির শিবতলার একটি বাড়িতে গোপন বৈঠক করছে—এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে যান আজমির ও তার কর্মীরা। পরে সেখানে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন আজমির।

সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই আহত লোকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ইমদাদুল হক শিবিরের সাথি। মোস্তাকিম বিল্লাহ শিবিরের আলীপুর ইউনিয়ন শাখার সাবেক সেক্রেটারি। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা আছে।

ওসির দাবি, গ্রেপ্তার ইমদাদুল হক ও মোস্তাকিম বিল্লাহ স্বীকার করেছেন তাঁরা ওই বাড়ির দোতলায় নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছিলেন। তিনি বলেন, তাঁরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন ওই মেসটি জামায়াত-শিবির ব্যবহার করছিল। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক তসলিম আহমেদ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ৪০ থেকে ৫০ জনের নামে মামলা করেছেন।