রাবির নতুন ভর্তিপদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার নতুন পদ্ধতি ও বর্ধিত আবেদন ফি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এবারের পরীক্ষায় যেকোনো বিষয়ে ভর্তি হতে উচ্চমাধ্যমিকে পঠিত নিজ নিজ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বলছেন, ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এবার উচ্চ হারে ফি আদায় করা হবে, যা অনুচিত।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, এবার শিক্ষার্থীদের প্রথমে অনলাইনে ৫৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করতে হবে। প্রাথমিক আবেদন থেকে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৩২ হাজার শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক আবেদনে উত্তীর্ণ প্রতি শিক্ষার্থীকে ১৯৮০ টাকা দিয়ে চূড়ান্ত আবেদন করতে হবে।

অন্যদিকে এবারে ভর্তি পরীক্ষায় বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। এবার সব বিভাগে ভর্তির জন্য তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

গত ২৪ জুলাই ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদন ফি কমানো ও একটি বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখার দাবিতে একাধিক মানববন্ধন, সমাবেশ করেছেন। এ ছাড়া, আবেদন ফি কমানোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। এবার শিক্ষার্থীরা শুধু একটি ইউনিটে আবেদন করতে পারায় অন্যবারের চেয়ে ব্যয় কম হবে। শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিকে যেসব বিষয় পড়েছেন, তাঁরা সেসব বিষয়েই পরীক্ষা দেবেন। ইউনিট সংখ্যা কমিয়ে আনায় শিক্ষার্থীরা এক দিনেই পরীক্ষা দিয়ে চলে যেতে পারবেন। এতে তাদের খরচ কমবে।

আবেদন ফির বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে অনেক সাধারণ পরিবারের সন্তান পরীক্ষা দিতে আসে, যারা শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই, তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফির পরিমাণ বছর বছর বাড়ছে। দেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিতেই আবেদন ফি এত বেশি নয়।’

ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত উপকমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উপকমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ‘এ’ ইউনিটে (কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান, চারুকলা অনুষদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) ভর্তিপদ্ধতি নিয়ে কলা অনুষদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে। কলা অনুষদের পক্ষ থেকে ‘এ’ ইউনিটে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ‘এ’ ইউনিটে কেবল এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবেন।

প্রতি আসনের বিপরীতে আয় অন্তত ৪৭ হাজার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপদ্ধতি ও আবেদন ফির হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের ভর্তি পরীক্ষা থেকে কমপক্ষে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই আয়ের অর্ধেক পরীক্ষাসংক্রান্ত ব্যয়ে ও শিক্ষক-কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। বাকি ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার ও ১০ শতাংশ অনুষদগুলোর জন্য বরাদ্দ। এবারে বিশেষ কোটাসহ মোট ৪ হাজার ১৫১টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তিনটি ইউনিটের বিপরীতে ৩২ হাজার করে মোট ৯৬ হাজার শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তা নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান পড়লে সে সামাজিক বিজ্ঞানে পড়তে পারবে না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষকেরা কে? মানুষের অধিকার, শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্তগুলো সঠিক নয়। সাধারণ জনগণের ন্যূনতম সক্ষমতা বিবেচনা করে ফি নির্ধারণ করা উচিত।’

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, ‘সুচিন্তিত মতামত দিতে গেলে জ্ঞান-গরিমাসম্পন্ন শিক্ষকেরা বসে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানো, অর্থ যেন কম খরচ হয় সেসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে কয়েক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেখানে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করলে সবাই বুঝতে পারবে।’