বগুড়ায় ডেঙ্গুতে শিশু ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ

বগুড়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশুসহ বেশ কয়েকজন রোগী শনাক্ত হওয়ায় শিশু ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। ঈদে ঢাকা ছেড়ে আসা ডেঙ্গু রোগীদের কারণে শিশু ও শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

 ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে বাড়িতে মশকনিধনের জন্য কয়েল, ওষুধসহ নানা উপকরণ কিনতে দোকানে ক্রেতারা ভিড় করছেন। কেউ কেউ সন্তানদের স্কুল ব্যাগে মধকনিধনের স্প্রের বোতল ভরে দিচ্ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে মশা মারার সব উপকরণ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শহরের একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সানজিদ আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় একটি কোচিং হোমে এসেছিলেন মা সানজানা রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদে ঢাকা থেকে লোকজন আসবে শহরে। এ কারণে ডেঙ্গুঝুঁকি আরও বাড়ছে। ঈদে পরিস্থিতি কী হয়, সেটা ভেবে শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছি।’ 

বগুড়া জিলা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিব শাহরিয়ারকে নিয়ে উদ্বিগ্ন মা রোমানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সন্তানকে যাতে মশা না কামড়ায়, সে জন্য বাসায় সব সময় সতর্ক রয়েছি। কিন্তু স্কুলে পাঠানোর পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়।’

বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় শিশুরাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে জানার পর বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিন সকালে মশকনিধন ওষুধ ছিটানো হয়। এ ছাড়া পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

 বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ম রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরাও শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। তবে বিদ্যালয়ের কোথাও যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে জন্য নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

মনজুর কাদের নামের এক অভিভাবক বলেন, এডিস মশা থেকে বাঁচার জন্য ভরসা মশার কয়েল আর তরল স্প্রে। কিন্তু বাজারে এসব উপকরণের দাম এখন চড়া।

শহরের ফতেহ আলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েল থেকে শুরু করে মশা মারার সব উপকরণের দাম বেড়েছে। ৪৭০ মিলি লিটারের মশা মারার অ্যারোসল এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকায়। এখন একই পরিমাণের অ্যারোসল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। ৮০০ মিলির অ্যারোসল কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৩৫ টাকায়। এখন তা ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে এসিআই কনজ্যুমার প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেডের (অ্যারোসল) বগুড়ার বিক্রয় প্রতিনিধি ফেরদৌস সরদার বলেন, ৪৭৫ মিলির অ্যারোসল পাইকারি মূল্য ২৬৮ টাকা। চাহিদা কম থাকায় গত মাস পর্যন্ত প্রতি আটটিতে একটি বোনাস দেওয়া হতো দোকানিদের। ফলে তাঁরা পাইকারি দামের চেয়েও কম দামে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আটটিতে বোনাস অফার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৮০০ মিলির অ্যারোসলের পাইকারি মূল্য ৩৭০ টাকা। আগে প্রতি আটটির সঙ্গে একটি বোতল বোনাস দেওয়া হতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন ১২টির সঙ্গে একটি বোনাস দেওয়া হচ্ছে। ফলে খুচরা দোকানিরা গায়ে লেখা দামে অ্যারোসল বিক্রি করছেন।

বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, গতকাল পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২১৯ জন রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৯৩ জন। 

 শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭৯ জন। এর মধ্যে ৭২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে, ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১০১ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে।