মশা কি আর মন্ত্রীর কথা শোনে?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাষায়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে। অল্পদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাবে। কিন্তু মশারা কি আর মন্ত্রীর কথা শোনে? বা শুধু কথায় কি মশা ‘ম্যানেজড’ হয়? বাস্তবে মশাকে ‘ম্যানেজ’ করা যায়নি। বরং মন্ত্রীর বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করে এডিস মশার আক্রমণ আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা যেমন মশারা শুনছে না, তেমনি মন্ত্রী মহোদয়ও মশার আক্রমণ টের পাচ্ছেন না। গত শনিবার তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। আর রোগীর সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না।

কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান মন্ত্রীর সুরে কথা বলছে না। গতকাল রোববার দেওয়া সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৭০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অথচ গত মাসে (জুলাই) প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী ভর্তি হয়েছিল। চলতি মাসের তিন দিনে গড় দৈনিক ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৫।

আর মন্ত্রী কিনা বলছেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তিন-চার দিন ধরে একই হার রয়েছে। রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না (৪ আগস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

জাহিদ মালেক সেদিন আরও বলেন, ‘সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি আরেকটু বাড়তে পারে।’ মন্ত্রীর কথায় মনে হতেই পারে, এতে তাঁরা সন্তুষ্ট। যদিও প্রথম আলো এখন পর্যন্ত ৮৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর জেনেছে। প্রথম আলো সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও পরিবারের কাছ থেকে এ খবর নিশ্চিত হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা সব সময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। আমরা মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করছি, মশা মারার জন্য নতুন ওষুধ আনছি। আমরা বিশ্বাস করি, পরিস্থিতি অল্প দিনের মধ্যে ম্যানেজ হয়ে যাবে। (বাসস)।’

>মন্ত্রী মহোদয় মশার আক্রমণ টের পাচ্ছেন না
সরকারি পরিসংখ্যান মন্ত্রীর সুরে কথা বলছে না
এডিস মশার আক্রমণ আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে
তিন দিনে গড় দৈনিক ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৫


কিন্তু এখনো মশা ‘ম্যানেজ’ হয়নি। এখন পর্যন্ত মশা মারতে কার্যকর কোনো ওষুধ আনতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। হাসপাতালগুলোত রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। গত শনিবার মন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্যানিকড হওয়ার কিছু নেই (বাংলা ট্রিবিউন)।’ 

মন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হওয়াটা কঠিন। কারণ, বাস্তবতা ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা বেশ আগে থেকেই বলছিলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তাঁদের সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তাই যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি শুধু কথা দিয়ে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে চান, নাকি আতঙ্কের মধ্যে হাস্যরস সৃষ্টি করে মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিয়ে পরিস্থিতি ভুলিয়ে রাখতে চান? 

এরও আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বাড়ছিল, তখন ডেঙ্গু মশাকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তুলনা করে বেশ সমালোচিত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত ২৬ জুলাই তিনি বলেছিলেন, ‘যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন বাড়ে আমাদের দেশে এসে, সেভাবে মসকিউটো পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে।’

এই বক্তব্য দিয়ে গত ২৮ জুলাই জাহিদ মালেক সপরিবার উড়ে যান মালয়েশিয়া। ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন প্রকট হচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরে দেশময় সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন তিনি। তবে ঠিক কী কারণে তিনি বিদেশ গিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করতে গেলে এক সাংবাদিককে ধমকের সুরে থামিয়ে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে থামছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ।