হজে যাওয়া হচ্ছে না পঞ্চগড়ের প্রতারিত ৩৭ জনের

আত্মীয়স্বজনদের কাছে দোয়া চেয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পঞ্চগড়ের ৩৭ জন ব্যক্তি। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রার প্রাক্‌-নিবন্ধনের রসিদ হাতে ধরিয়ে দিয়ে হজযাত্রার সম্ভাব্য তারিখও জানানো হয়েছিল তাঁদের। শেষ সময়ে এসে ফ্লাইটের (বিমানের) ডাক না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, দালালের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাঁরা। ৩৭ জন মিলে ৭২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁদের হজযাত্রা। এমনকি ফিরে পাচ্ছেন না তাঁদের পাসপোর্ট।

গতকাল রোববার দুপুরে প্রতারণার শিকার হজযাত্রীরা জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারণা শিকার হওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী উপজেলার ২৭ জন এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার ১০ জন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার ওয়াছেদ আলী শাহ ও কুমিল্লার জেলার লাকসাম উপজেলার আবদুল জলিল নামের দুই ব্যক্তি (মোয়াল্লেম হিসেবে পরিচিত) বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে হজে পাঠাতেন। এবার পঞ্চগড়ের তিনটি উপজেলার ৩৭ জন মোট ৭২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা তাঁদের কাছেই জমা দেন। ওই দুই ব্যক্তি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাক্‌-নিবন্ধন সম্পন্নের কপি হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের দেন। প্রাক্‌–নিবন্ধনে প্রতিজনের জন্য ৩১ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে হয়। সেই সঙ্গে তাঁদের এটিএম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড এবং সান ফ্লাওয়ার এয়ার লিংকার্স নামে দুটি হজ এজেন্সির রসিদও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রত্যেকে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ওই দুই ব্যক্তির কাছে জমা দেন। পরবর্তী সময় ১৭ জুলাই, ২০ জুলাই ও ৩ আগস্ট সম্ভাব্য বিমানের তারিখ দেওয়া হয়। ৩ আগস্ট পার হয়ে গেলে হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গতকাল দুপুরে প্রতারণার শিকার ওই ৩৭ জন জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হন।

সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা এলাকার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি হজে যাওয়ার জন্য ওয়াছেদ আলী শাহকে তিন লাখ টাকা দিয়েছি। আমাকে প্রথমে বলা হয়েছিল, আমার বিমানের তারিখ ১৭ জুলাই। পরে সেই তারিখ পার হওয়ার পর যোগাযোগ করলে আমাকে জানানো হয় ২৯ জুলাই নতুন তারিখ। সেদিনও আমার যাওয়া হয়নি। এখন ওয়াছেদ আলীর মুঠোফোন বন্ধ। আমার জমা দেওয়া পাসপোর্টও ফেরত দিচ্ছে না।’

মোয়াল্লেম হিসেবে পরিচিত ওয়াছেদ আলী শাহ ও আবদুল জলিলের ব্যবহৃত একাধিক মুঠোফোন নম্বরের সব কটিই বন্ধ পাওয়া যায়। ওয়াছেদ আলী শাহর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘হজ এজেন্সিগুলোর নামে রসিদ বই আবদুল জলিল আমার বাবাকে দেন এবং আমার বাবা হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের রসিদ কেটে দেন। তাঁদের দেওয়া টাকা আবদুল জলিলের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আসলে আবদুল জলিল এজেন্সিগুলোতে টাকা জমা না দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। আর এদিকে আমার বাবা স্থানীয় লোক হওয়ায় তাঁর ওপরে সব দোষ চেপেছে। এখন তিনি বিপদে পড়েছেন। এ কারণে এখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা আবদুল জলিল ও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।’ 

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে খোঁজ তিনি জেনেছেন যে ওই ৩৭ জন পূর্ণাঙ্গভাবে নিবন্ধিত হননি। এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকেও কিছুই করা যাচ্ছে না। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাঁদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।