এমন স্বস্তি কত দিন টিকবে?

বেড়া বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন করমজা হাট এলাকায় এখন আর যানজট নেই। গত শনিবারের চিত্র।
বেড়া বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন করমজা হাট এলাকায় এখন আর যানজট নেই। গত শনিবারের চিত্র।

পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের বেড়া বাসস্ট্যান্ড ও কাশিনাথপুর বাজার তিন দিন আগেও গাড়িচালক ও যাত্রীদের জন্য ছিল আতঙ্কের এলাকা। মহাসড়কের এই অংশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় এখানে যানজট লেগেই থাকত। বিশেষ করে হাটের দিনে এ স্থান দুটি পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগত। তবে এখন নেই যানজটের ছিটেফোঁটাও। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুটি স্থানের সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। তবে সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের প্রশ্ন, এমন স্বস্তি কত দিন টিকবে? কারণ এর আগেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। দুই-তিন মাসের মধ্যে পুনর্দখল হয়ে অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আগের চেয়েও বেড়ে যায়। 

পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করমজা ও কাশিনাথপুর হাট দুটির অবস্থান বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার সীমানায়। কাশিনাথপুরে রবি ও বৃহস্পতিবার এবং করমজায় শনি ও মঙ্গলবারে হাট বসে। দুটি হাটই পাবনা-ঢাকা মহাসড়কসংলগ্ন। সড়কের বড় অংশ দখল করে দোকানপাট ও স্থাপনা গড়ে ওঠায় সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। হাটবার এলেই এই দুটি স্থানে সৃষ্টি হতো ভয়াবহ যানজটের। হাটবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতেও যানজট দেখা যেত। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলোয় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কাশিনাথপুরে এবং ২০১৬ সালের ৩ জুন করমজা হাটে অভিযান চালিয়ে ওই দুটি স্থান থেকে দুই শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। এতে যানজট থেকে মুক্তি পান গাড়িচালক ও যাত্রীরা। সেই স্বস্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ওই দুটি স্থানেই আগের চেয়ে আরও বেশি দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা বসে যায়। ফলে যানজট আগের চেয়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। হাটবারে দুটি স্থানে সড়কের দুই পাশে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারব্যাপী যানজট হতো। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনকে আটকে থাকতে হতো। অবৈধ দোকানপাটের কারণে মহাসড়কের পাশের ফুটপাত দিয়েও পথচারীরা চলতে পারতেন না। 

অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের আগে এভাবে যানজট লেগেই থাকত। কয়েক মাস আগের চিত্র
অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের আগে এভাবে যানজট লেগেই থাকত। কয়েক মাস আগের চিত্র

সম্প্রতি সওজ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের জন্য পাঁচ দিনব্যাপী অভিযান কর্মসূচি হাতে নেয়। অভিযানের প্রথম দিন গত বুধবার (৩১ জুলাই) পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের কাশিনাথপুরে এবং কাশিনাথপুর-কাজীরহাট ও কাশিনাথপুর-নগরবাড়ী মহাসড়কের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ আট শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার বেড়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন করমজা হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এরপর বদলে যায় মহাসড়কের ওই দুটি স্থানের চিরচেনা দৃশ্য। গত বৃহস্পতিবার কাশিনাথপুরে হাটবার হলেও সেখানে ছিল না তেমন কোনো যানজট। অপরদিকে গত শনিবার বেড়া বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন করমজা হাটে হাটবারের দিনেও মহাসড়ক ছিল যানজটমুক্ত। দুটি হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ হওয়ায় হাটের জায়গা বেড়েছে বলে সবাই হাটেই বসতে পারছেন। কাউকে মহাসড়কে গিয়ে বসতে হচ্ছে না। 

গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে করমজা হাটসংলগ্ন মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। সড়কের ওপর হাটও বসেনি। হাটসংলগ্ন বেড়া বাসস্ট্যান্ডে থেমে থাকা তিতাস পরিবহনের চালক ফজলু মিয়া বলেন, ‘আগে মহাসড়কের এই অংশে যানজট লেগে থাকত। এখন কোনো যানজট নেই।’ সওজের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ রায় বলেন, ‘সওজের জায়গা কোনোভাবেই আর বেদখল হতে দেওয়া হবে না। দখল হওয়ামাত্রই পুনরায় অভিযান চালানো হবে। মহাসড়ক যানজট ও ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য আমরা যেকোনো ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করব।’