ডেঙ্গু চিকিৎসায় ঢাকার ৬ হাসপাতাল পেল ৩৬ কোটি টাকা

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসার কথা বলে ঢাকার ছয়টি হাসপাতালের জন্য বাড়তি ৩৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ টাকায় শুধু ওষুধ কেনা হবে না, ডেঙ্গু রোগী ও রোগীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের চাপ সামলাতে হাসপাতালের নিরাপত্তাসেবা কেনার জন্যও ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া ব্যয় হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও পথ্য কেনার জন্য।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত মঙ্গলবার ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে এ টাকা চায়। অর্থ বিভাগও এক দিনের মাথায় অর্থাৎ গত বুধবার পুরো অর্থই বরাদ্দ দিয়ে দেয়। 

বরাদ্দের এই অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এম হাফিজউদ্দিন খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু যেহেতু মহামারি আকার ধারণ করেছে, তাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগ ঠিকই আছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন কেনাকাটার স্বচ্ছতা নিয়ে। দুঃসময়কে অছিলা করে দেশে অনেক দুর্নীতি হওয়ার নজির রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যেন তেমনটা না হয়। মশা মারার ওষুধ আমদানিতে যেমন লুটপাট হয়েছে, অন্তত এখন যেন তা না হয়।’ ভাড়ার ভিত্তিতে নিরাপত্তাসেবা কেনার জন্য এত টাকা কীভাবে খরচ হবে, সেই প্রশ্নও তোলেন হাফিজউদ্দিন খান। 

>জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার ছয়টি হাসপাতালের জন্য এ টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। বরাদ্দের টাকা কীভাবে ব্যয় হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।

সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করেছে—এ কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বলেছে, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের এখন উপচে পড়া ভিড়। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মচারীরা চিকিৎসায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে রোগী ও রোগীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের চাপে নিয়মিত জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকেরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে এসব চাপের কারণে হাসপাতালগুলোতে ওষুধপথ্য এবং নিরাপত্তাসেবার চাহিদাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে জনগণের চিকিৎসাসেবা, বিশেষ করে সুষ্ঠুভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই বাড়তি বরাদ্দের দরকার। 

 স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমরাও জরুরি ভিত্তিতেই কেনাকাটা শুরু করব।’ 

টাকা পেয়েছে ছয়টি হাসপাতাল 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ছয়টি হাসপাতালের জন্য ৩৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে অর্থ বিভাগকে জানিয়েছে। পুরো টাকা ব্যয় করা হবে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে। এর মধ্যে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে হাসপাতালগুলোর জন্য ভাড়ায় নিরাপত্তাসেবা কিনতে। আর ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে রোগীদের পথ্য কেনার জন্য এবং ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লাগবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী কেনার জন্য। বাকি ২৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে ওষুধ কিনতে। 

সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাগবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এ হাসপাতালের জন্য ওষুধ বাবদ লাগবে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া লাগবে ৩ কোটি টাকার পথ্য, ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী এবং ৭০ লাখ টাকার নিরাপত্তাসেবা। 

চার শ্রেণিতে ব্যয় করার জন্য অন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জন্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের জন্য ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।