অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় নোয়াখালীতে আদালতের নাজির গ্রেপ্তার

নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাবেক রেকর্ড কিপার (বর্তমানে জেলা জজ আদালতের নাজির) মো. আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ছবি: সংগৃহীত।
নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাবেক রেকর্ড কিপার (বর্তমানে জেলা জজ আদালতের নাজির) মো. আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ছবি: সংগৃহীত।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দুটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। আজ সোমবার নোয়াখালীতে নিজ কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল। মো. আলমগীর নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাবেক রেকর্ড কিপার (বর্তমানে জেলা জজ আদালতের নাজির)।

দুদকের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের আগে তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুটি মামলা করা হয়।

প্রথম মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে আলমগীরের স্ত্রী নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার নাজমুন নাহার এবং ফেনীর দাগনভূঞার বিজন ভৌমিক ও আফরোজা আক্তার। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত মোট ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই সম্পদ ভোগদখল রেখে প্রতারণামূলকভাবে মানি লন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধ, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে লব্ধ অর্থের উৎস গোপনের লক্ষ্যে হেবা দলিল সম্পাদন, দলিলে জাল জালিয়াতি করেছেন। এ ছাড়া বেনামে সম্পদ অর্জন এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঐশী ট্রেডার্সের ব্যবসার আড়ালে মোট ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।

দ্বিতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে শুধু মো. আলমগীরকে। এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী হয়েও নাজিরের দাপ্তরিক পরিচয় গোপন করে ব্যবসা হিসাব দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব খুলে ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা লেনদেন করেছেন।
দুটি মামলাই করেছেন দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ।

দুদক সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলমগীর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার হীরাপুর গ্রামের হাজি আবদুল মন্নানের ছেলে। তিনি ১৯৯৭ সালে ১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্টেনোগ্রাফার পদে যোগ দেন। এরপর সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমতে স্থাবর সম্পদের হিসাব অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের কাছে দাখিল করেন। ওই হিসাবে উল্লেখ করেন, গ্রামে তাঁর ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ নেই, পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পরে দুদক অনুসন্ধানে নামে।

অভিযোগ ওঠে, মোহাম্মদ আলমগীর আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজের নাম ভাঙিয়ে ২০০৭ সালে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৬০ কর্মচারীর কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য করেন। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিভিন্ন মামলার দালালি ও অনিয়ম করে বিপুল অর্থ অর্জন করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০০৭ সালে তাঁর স্ত্রী নাজমুন নাহারকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের অফিস সহকারী এবং ভাইকে স্টেনোগ্রাফার পদে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।